ক্রিপ্টো কারেন্সি কি – বিটকয়েন কি | ক্রিপ্টো কারেন্সি বা বিটকয়েন থেকে আয়

ক্রিপ্টো কারেন্সি কি অথবা বিটকয়েন কি? বর্তমানে ক্রিপ্টোকারেন্সি অনলাইনের সবচাইতে ট্রেন্ডিং একটা টপিক। ক্রিপ্টোকারেন্সি দিয়ে অনেকে লক্ষ লক্ষ টাকা ইনকাম করছে, আবার কেউ কেউ সবকিছু হারিয়ে পথে বসছে। আজকের এই আর্টিকেল থেকে আপনারা ক্রিপ্টোকারেন্সি সম্পর্কে একটা পরিষ্কার ধারণা পাবেন এবং ক্রিপ্টোকারেন্সি দুনিয়ার গোপন রহস্য সম্পর্কে জানতে পারবেন। তারপর আপনার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন ক্রিপ্টো দুনিয়াতে প্রবেশ করা উচিত কি না?

ক্রিপ্টো কারেন্সি কি ?

সহজ কথায় বলতে গেলে ক্রিপ্টোকারেন্সি হচ্ছে ডিজিটাল মুদ্রা । আর ক্রিপ্টো সর্বদা ব্লকচেইন এর মাধ্যেমে লেনদেন হয়। অর্থাৎ ক্রিপ্টোকারেন্সির ডাটাবেজ হল ব্লকচেইন। আর সবচাইতে বড় কথা হল এই ডিজিটাল অর্থ কোনো দেশের সরকার বা রাষ্ট্র দ্বারা পরিচালিত নয়। তবে বিশ্বের ১১১ দেশে ক্রিপ্টোকারেন্সি এখন বৈধ। বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত ক্রিপ্টোকারেন্সি পুরোপুরি বৈধ নয়, তবে খুব শীঘ্রই এটা বাংলাদেশে বৈধতা পেতে পারে। কিন্তু অনেকে বাংলাদেশে P2P মাধ্যেমে ক্রিপ্টোকারেন্সি ক্রয়-বিক্রয় করে।

ক্রিপ্টো কারেন্সির ইতিহাস

আমরা অনেকেই ক্রিপ্টোকারেন্সি বলতে শুধু মাত্র বিটকয়েনকে বুঝি কিন্তু বিটকয়েন পূর্ব এবং পরের আর অনেক গুলো ক্রিপ্টোকারেন্সি রয়েছে। মূলত ২০০৯ সালে সর্বপ্রথম ক্রিপ্টোকারেন্সি হিসেবে বিটকয়েন এর প্রচলন শুরু হয়। কিন্তু এর বহু পূর্বে ১৯৯৮ সালে (Wei Dai) ডিস্ট্রিবিউটেড ক্যাশ সিস্টেম হিসেবে বি-মানি প্রচলন করেছিলেন। এরই ধারাবাহিকতায় কয়েক বছর পরে Nick Szabo নামের একজন কম্পিউটার বিজ্ঞানী ও ক্রিপ্টোগ্রাফার বিট-গোল্ড এর প্রচলন করেছিলেন যেটা ছিল ইলেক্ট্রনিক ক্যাশ সিস্টেম।
তারপর কিছুকাল পরে (Hal Finney) নামের আরেকজন কম্পিউটার সায়েন্টিস্ট যুক্ত হয়েছিলেন। কিন্তু ২০০৯ সাতাশি নাকামোতো (ছদ্মনাম) নামে একজন কম্পিউটার ডেভেলপার বিটকয়েন কে প্রথম ডিসেন্ট্রালাইজড ক্রিপ্টোকারেন্সি হিসেবে জনসাধারনের জন্য প্রচলন করেন। বর্তমানে বিটকয়েন ছাড়াও মার্কেটে আরো ২০ হাজার এর উপরে ক্রিপ্টোকারেন্সি রয়েছে। নিচে কিছু জনপ্রিয় ক্রিপ্টোকারেন্সির নাম দেওয়া হলোঃ
  • Bitcoin (BTC) (বিটকয়েন)
  • Ethereum (ETH) (ইথিরিয়াম)
  • Tether (USDT) (তেদার)
  • BNB (BNB) (বি,এন,বি)
  • Binance USD (BUSD) (বাইনান্স ইউ,এস,ডি )
  • XRP (XRP) (এক্স,আর, পি)
  • Cardano (ADA) (কারডনো)
  • Solana (SOL) (ছলানা)
  • Dogecoin (DOGE) (ডগিকয়েনা)
  • ক্রিপ্টোকারেন্সি থেকে কিভাবে উপার্জন করতে হয়?
ক্রিপ্টোকারেন্সি থেকে মূলত দুই ভাবে আয় করা যায়ঃ
  • ১. মাইনিং করার মাধ্যেমে
  • ২. ক্রিপ্টো কেনা-বেচার মাধ্যমে।
প্রথমটি আমাদের দেশে করা একটু বেশি কঠিন কারণ আমাদের নির্ভরযোগ্য ইন্টারনেট প্রয়োজন এবং রিলায়েবল ইলেকট্রিসিটির প্রয়োজন। মাইনিং এর জন্য সারাদিন একটি কম্পিউটার চালিয়ে রাখতে হবে।

আটিকেলের শুরুতে উল্লেখ করা হয়েছে, ব্লকচেইনের মধ্যে ক্রিপ্টোকারেন্সি লেনদেন করা হয়, তাই এর জন্য অনেক কম্পিউটারের প্রয়োজন হয়। অনেক ওয়েবসাইট আছে যেগুলা মাইনিং এর জন্য পার্টনারশিপ প্রোগ্রাম দিয়ে থাকে। তবে তার জন্য আপনার একটা ভালো মানের GPU বেইস্ট একটা কম্পিউটারের দরকার হবে।
অর্থাৎ আপনার কম্পিউটারে গ্রাফিক্স কার্ডের এর পরিমান বেশি থাকতে হবে। এই সবগুলো রিকোয়ারমেন্টস্গুলো ফিলআপ করতে পারলে কেবল মাত্র মাইনিং এর মাধ্যেমে ক্রিপ্টো থেকে ইনকাম করতে পারবেন। আর হে পার্টনার প্রোগ্রাম নেয়ার জন্য আপনাকে কোনো প্রকার চার্য প্রদান করতে হবে না। নিচে কিছু ওয়েবসাইট এর নাম উল্লেখ করা হলোঃ
  • StormGain
  • ECOS
  • Hashing24
  • BeMine
  • Hashshiny
  • BitDeer
  • Awesome Miner

ক্রিপ্টো কেনা-বেচা

ক্রিপ্টো থেকে ইনকাম করার সবচাইতে জনপ্রিয় মাধ্যেম হল ক্রিপ্টো ক্রয়-বিক্রয়।মূলত সবাই এটা করে। আমরা প্রায়ই নিউজ থেকে ক্রিপ্টোতে সফলতার কথা শুনে থাকি। অনেকেই কয়েকদিনের মধ্যে কোটি টাকার মালিক হয়ে যায়। আর এর পেছনের গল্প হল তারা প্রত্যেকে ক্রিপ্টোতে ইনভেষ্ট করেছে। এবার আমরা কিভাবে ক্রিপ্টোতে ইনভেষ্ট করতে পারি। তার জন্য অনেকগুলো ওয়েবসাইট এবং সফটওয়্যার রয়েছে্ এবং এগুলার মোবাইল ‍এপ্লিকেশন্ও রয়েছে। অর্থাৎ আপনি যেকোনো ডিভাইস ইউজ করতে পারবেন। যদিও ক্রিপ্টো এখনো বাংলাদেশে বৈধ নয়, তবুও আপনি P2P এর মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে ট্রেডিং করতে পারেন।

যেহেতু ক্রিপ্টো আমাদের বাংলাদেশে বৈধ নয়, তাই আমরা সেই ওয়েবসাইট এবং সফটওয়্যারে ডলার জমা বা তুলতে পারি না। সেজন্য ঐ ওয়েবসাইট এবং সফটওয়্যার গুলোতে আপনি P2P নামের একটা অপশন দেখতে পাবেন যেখান থেকে আপনি বিকাশের মাধ্যেমে ডলার কিনতে বা বিক্রয় করতে পারেন (তবে এক্ষেত্রে বর্তমান বাজার মূল্য থেকে ডলারের দাম বেশি হয়)। তাহলে ডলার কিনা হয়ে গেলে সেই ডলার দিয়ে আপরি খুব সহজে ক্রিপ্টো কেনা-বেচা করতে পারবেন। । আপনি মাত্র ১০ ডলার ইনভেষ্ট করে কাজ শুরু করতে পারেন।

নিচে কিছু জনপ্রিয় ক্রিপ্টো ট্রেডিং ওয়েবসাইট এবং সফ্টওয়্যারগুলোর নাম দেওয়া হল যেগুলো আপনি যে কোনও ডিভাইস, মোবাইল ফোন বা কম্পিউটারে ব্যবহার করতে পারেন।
  • Binance
  • Coinbase Exchange
  • FTX
  • KuCoin
  • Kraken
  • Gate.io
  • Bitfinex
  • Bitstamp
  • Huobi Global
  • Gemini
তবে এই গুলোর মধ্যে Binance সবচাইতে বেশি মানুষ ব্যবহার করে থাকেন।

ইসলামিক নীতিতে বিচার করলে ক্রিপ্টোকারেন্সি কতটুকু হালাল?

ক্রিপ্টোকারেন্সি কে অনেক ইসলামিক স্কলার হালাল বলেছেন আবার অনেক ইসলামিক স্কলার এটাকে হারামও বলেছেন। আমি আপনাকে একটি পরিষ্কার ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করব যে আপনি এটি বুঝতে পারলে আপনি নিজেই বিচার করতে পারবেন এটি কতটা হালাল না হারাম। ইসলাম স্বর্ণ ও রৌপ্য মুদ্রা ছাড়া অন্য কোনো মুদ্রা গ্রহণ করে না।

এক্ষেত্রে আমরা টাকা বা অন্য কোন মুদ্রাকে সম্পূর্ণ হালাল মনে করতে পারি না। কিন্তু টাকা বা অন্য যেকোনো কারেন্সির বিপরীতে কিছু এসেট জমা রাখতে হয় সেটা হতে পারে সোনা অথবা রুপা হতে পারে ডলার। কিন্তু সোনা সবসময়ই ডলারের সম্পদ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এবার এক্ষেত্রে এ ধরনের কারেন্সি গুলোকে আমরা সরাসরি হারাম ও বলতে পারি না।
কিন্তু এখানে ক্রিপ্টো সম্পূর্ণ আলাদা। ক্রিপ্টো কয়েনের বিরুদ্ধে তাদের কোন সম্পদ নেই। যদিও বলা হয় বিটকয়েন ক্রিপ্টোতে সম্পদ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। কিন্তু বিটকয়েন ও একটা ডিজিটাল মুদ্রা আর এটা কোনো দেশের সরকার দ্বারা পরিচালিত হয় না। তাই বিটকয়েনের বিপরীতে কোনো সম্পদ আছে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। এটাতো গেল এসেটএর বিষয় এবার আমি যদি ক্রিপ্টোতে ঝুঁকির পরিমাণ নিয়ে আলোচনা করি।

ক্রিপ্টোতে কোন মুদ্রা স্থিতিশীল নয়। তাই এতে ঝুঁকির পরিমাণ মাত্রাতিরিক্ত। এইতো গত এক বছরে বিটকয়েনের দাম ৭০ হাজার ডলার পর্যন্ত চলে গিয়েছিল আবার এটা ২০ হাজার ডলারে নেমে এসেছে। অর্থাৎ, অনেক মানুষ একটি বিটকয়েন থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা আয় করেছে, আবার অনেকে সর্বস্ব হারিয়েছে।

তাছাড়া সব ক্রিপ্টোকারেন্সিই কমবেশি এই রকম, হঠাৎ করে দাম অনেক বেড়ে যায় আবার হঠাৎ করে অনেক নিচে চলে যায়। এগুলার টাকা বা ডলারের মত না। ক্রিপ্টোকারেন্সির দাম স্থিতিশীল নয়। তাই আপনি যদি একটু গভীরে খনন করেন, আপনি দেখতে পাবেন যে এগুলো অনেকটা জুয়া খেলার মতো। আপনাকে অনেক ঝুঁকি নিয়ে এই মুদ্রাগুলো ক্রয়-বিক্রয় করতে হবে।
এবার অনেক ইসলামিক পন্ডিত এটাকে হালাল বলার কারণ হলো এটা একটা কারেন্সি কিন্তু এখানে পার্থক্যের কারণ হল এর ধরনটা একদমই একটা কারেন্সির মত না। ক্রিপ্টোকারেন্সি কেনাবেচা ছাড়া এখানে সঞ্চিত অর্থ রাখার কোনো উপায় নেই। তবে অনেক ক্রিপ্টো বিশেষজ্ঞ এটা বলছেন ভবিষ্যতে ক্রিপ্টো একটা স্থিতিশীল মুদ্রায় পরিণত হবে তখন সেগুলা সাধারণ কারেন্সির মত ব্যবহার করা যাবে। এখন আপনি নিজেই বিচার করতে পারেন যে ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকে ক্রিপ্টো কতটা হালাল বা হারাম।

পরিশেষে বলা যায় যে, আশাকরি আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনি জানতে পেরেছেন ক্রিপ্টো কারেন্সি বা বিটকয়েন কি? তাছাড়া ক্রিপ্টো কারেন্সির মাধ্যমে কিভাবে আয় করা যায়।আটিকেলটি আপনার ভালো লাগলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করে জানার সুযোগ করে দিন। ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

জরিপ টোয়েন্টিফোর ডটকম এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url