নগদ মোবাইল ব্যাংকিং
নগদ মোবাইল ব্যাংকিং : আগের সময়ে মানুষ ডাক বিভাগ ব্যবহার করে তথ্য আদান প্রদান এবং অর্থসংক্রান্ত লেনদেন করতেন। কিন্তু বর্তমানে মানুষের মধ্যে আধুনিকতার অগ্রসর হয়, এখন আর সেই ডাক বিভাগ ব্যবহার হয় না। সকলে আধুনিকভাবে আন্তঃযোগাযোগ এবং অর্থসংক্রান্ত লেনদেন করে থাকে। এতে করে সময় এবং নিরাপত্তা দুটি সমান ভাবে পাওয়া যায়।
বর্তমান সময়ে অর্থসংক্রান্ত লেনদেন দ্রুত গতিতে সম্পন্ন করার জন্য অনেক মোবাইল ব্যাংকিং সেবা চালু হয়েছে কিন্তু তার মধ্যে নগদ মোবাইল ব্যাংকিং হচ্ছে অন্যতম। নগদ গ্রাহকদের সব থেকে বেশি সুযোগ সুবিধা দিয়ে থাকে। তাই আজ আপনাদের মাঝে নগদ ব্যাংকিং সংক্রান্ত তথ্য শেয়ার করব এবং এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। তাহলে চলুন শুরু করা যাক।
পোস্ট সূচিপত্র:
নগদ মোবাইল ব্যাংকিং কি?
নগদ মোবাইল ব্যাংকিং হচ্ছে বাংলাদেশের একটি ইলেকট্রনিক মানি ট্রান্সফার সিস্টেম। এটি মূলত পোস্ট অফিসের পোস্টাল ক্যাশ কার্ড, যা ব্যবহার করে গ্রাহকরা সহজে অর্থ লেনদেন করতে পারেন।
২০১৮ সালের ১১ই নভেম্বর নগদ মোবাইল ব্যাংকিং সেবা কার্যক্রম শুরু হলেও ২০১৯ সালের ২৬ শে মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৪৮ তম বর্ষপূর্তিতে এটি বাংলাদেশের সকল নাগরিকদের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। বর্তমানে নগদ মোবাইল ব্যাংকিং সেবার অধিক জনপ্রিয়তা রয়েছে। কারণ Nagad mobile banking সেবা গ্রহণ করে বাংলাদেশের জনগণ সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে এবং এর সুবিধা গুলো ব্যবহার করে অধিক মাত্রায় ব্যবহারকারীর মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে।
নগদ মোবাইল ব্যাংকিং মুনাফা
নগদ মোবাইল ব্যাংকিং মুনাফা পেতে চাইলে সবার আগে আপনাকে একটি নগদ একাউন্ট খুলতে হবে এবং মুনাফা অপশনটি চালু করার জন্য আপনাকে যা করতে হবে- প্রথমে আপনি যখন নগদ একাউন্ট ওপেন করবেন তখন একটি মুনাফা অপশন দেখাবে। সেটি অন করার পর একটি নগদ অ্যাকাউন্ট খুললে আপনারা সে অ্যাকাউন্টে অর্থ জমা রাখার পর থেকে মুনাফা যোগ হতে শুরু করবে।
আরো পড়ুন: নগদ একাউন্টের সুবিধা
নগদ মোবাইল ব্যাংকিং থেকে মুনাফা পাওয়ার জন্য আপনাকে অবশ্যই সঞ্চয় করতে হবে। আর এই সঞ্চয়ের উপর আপনাকে মুনাফার পরিমাণ নির্ধারণ করে দেয়া হবে।
নগদ মোবাইল ব্যাংকিং সঞ্চয় হার
Nagad mobile banking সেবা থেকে মুনাফা পাওয়ার জন্য প্রথমে সঞ্চয় করতে হবে। সঞ্চয়ের উপর মুনাফা প্রদান করা হয়।
এ সংক্রান্ত সকল তথ্য নিম্নে দেয়া হল। যাতে আপনারা নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ জমা রাখার ফলে নির্দিষ্ট পরিমাণ মুনাফা পেতে পারেন।
- আপনার নগদ একাউন্টে টাকার পরিমান ০-১,০০০ টাকা থাকে আপনি কোন মুনাফা পাবেন না।
- আপনার একাউন্টে যদি ১,০০১-৫,০০০ টাকা থাকে তাহলে সেই টাকার উপর ৫% হারে মুনাফা পাবেন।
- এছাড়াও আপনার একাউন্টে যদি ৫,০০১-৩,০০,০০০ টাকা থাকে তাহলে সেই টাকার উপর ৭.৫% হারে মুনাফা পাবেন।
এখানে আপনি যে মুনাফার হার দেখতে পাচ্ছেন সেই মুনাফা আপনারা বাৎসরিক হিসেবে পাবেন। কিন্তু এক বছরের মুনাফা গুলো প্রতি মাসে যে অংশ আসবে সেটি প্রতিমাসে পেয়ে যাবেন।
নগদ মোবাইল ব্যাংকিং মুনাফা হিসাব
আপনাদের বোঝানোর সুবিধার্থে একটি উদাহরণের মাধ্যমে নগদ মোবাইল ব্যাংকিং মুনাফা হিসাবটি সম্পূর্ণ পরিষ্কার একটি ধারণা দিচ্ছি। যাতে করে আপনারা খুব সহজেই মুনাফা সংক্রান্ত হিসাব বুঝতে পারেন।
উদাহরণস্বরূপ,
আপনি নগদ একাউন্টে ১০,০০০ টাকা জমা রেখেছেন। এই ১০,০০০ টাকার ওপর ৭.৫% হারে মুনাফা পাবেন। তার মানে আপনি প্রতি ১০০ টাকায় ৭.৫ টাকা মুনাফা পাবেন।
ধরা যাক,
১ টাকায় পাবেন (৭.৫/১০০)= ০.০৭৫ টাকা
তাহলে ১০,০০০ টাকায় পাবেন (১০০০০/০.০৭৫)= ৭৫০ টাকা।
এখানে ৭৫০ টাকা আপনি বাৎসরিক হিসাবে নগদ মোবাইল ব্যাংকিং সেবা থেকে মুনাফা পাবেন। আর যখন আপনি প্রতিমাসে পাবেন তখন এই টাকার পরিমাণ দাঁড়াবে। (৭৫০/১২)= ৬২.৫ টাকা ।
আরো পড়ুন: নগদ উদ্যোক্তা একাউন্ট খোলার নিয়ম
সুতরাং আপনি এক বছরে ১০,০০০ টাকার ওপর পাবেন ৭৫০ টাকা এবং এই ৭৫০ টাকা প্রতি মাস হিসেবে পাবেন ৬২.৫ টাকা।
নগদ মোবাইল ব্যাংকিং মুনাফা পাওয়ার শর্ত
আপনি যদি নগদ মোবাইল ব্যাংকিং সেবা ব্যবহার করে মুনাফা পেতে চান তাহলে অবশ্যই আপনাকে নির্ণয়ের শর্ত গুলো পালন করতে হবে তাছাড়া আপনি কোন মুনাফা পাবেন না।
- নগদ মোবাইল ব্যাংকিং মুনাফা পাওয়ার জন্য কমপক্ষে আপনাকে প্রতিমাসে দুটি লেনদেন সম্পন্ন করতে হবে
- লেনদেন সম্পন্ন করার পর দিন শেষে মাসজুড়ে একাউন্টে কমপক্ষে ১,০০০ টাকা রাখতে হবে।
- প্রতি মাসে আপনার একাউন্টে টাকা থাকবে সেটার উপর আপনার মুনাফার পরিমাণ হিসাব করা হবে।
- এছাড়া সরকারি সকল নিয়ম কানুন মেনে ট্যাক্স এবং ভ্যাট কেটে নেওয়ার পর বছরে ২ বার আপনার অ্যাকাউন্টের মুনাফার অর্থযুক্ত করে দেওয়া হবে।
নগদ মোবাইল ব্যাংকিং হেল্পলাইন নাম্বার
আপনি যখন নগদ মোবাইল ব্যাংকিং সেবা গ্রহণ করবেন তখন আপনার বিভিন্ন সময়ে নগদ মোবাইল ব্যাংকিং সংক্রান্ত তথ্য জানার জন্য অথবা কোন সমস্যায় পড়লে সেই সমস্যার সমাধানের জন্য তাদের সহযোগিতার প্রয়োজন।
তাদের সহযোগিতার জন্য আপনারা বেশ কয়েকটি পথ অবলম্বন করতে পারেন। তার মধ্যে সবচেয়ে সহজ পথ হচ্ছে তাদের হেল্পলাইন নাম্বারে ফোন দিয়ে যোগাযোগ করা। নিম্নে তাদের হেল্পলাইন নাম্বার উল্লেখ করা হলো এবং আপনারা কোন কোন পদ্ধতিতে তাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন সেগুলো সম্পর্কে অবগত করা হলো।
- নগদ মোবাইল ব্যাংকিং হেল্পলাইন নাম্বার 096 096 16167
- নগদ মোবাইল ব্যাংকিং নিজস্ব ওয়েবসাইট nagad.com
- Nagad mobile banking ইমেইল এড্রেস info@nagad.com.bd
- নগদ মোবাইল ব্যাংকিং কল সেন্টার 16167
- নগদ মোবাইল ব্যাংকিং ফেসবুক পেজ
নগদ মোবাইল ব্যাংকিং প্রশ্ন উত্তর
১. নগদ একাউন্ট খোলার জন্য অর্থ প্রদান করতে হবে কি?
উত্তরঃ নগদ একাউন্ট খোলার জন্য কোন অর্থ প্রদান করতে হয় না। একদম ফ্রিতে আপনাদের প্রয়োজনীয় ইনফরমেশন দিয়ে নগদ একাউন্ট খুলতে পারবেন।
২. নগদ একাউন্ট খোলার জন্য কোন কোন কাগজপত্র প্রয়োজন হয় ?
উত্তরঃ নগদ একাউন্ট খোলার জন্য অবশ্যই জাতীয় পরিচয় পত্র প্রয়োজন হবে। জাতীয় পরিচয় পত্রের ছবি সংযুক্ত করতে হবে এবং প্রয়োজনীয় তথ্য প্রদান করতে হবে। আপনার ছবি ভেরিফিকেশনের জন্য আপনার নিজের ছবি তুলে দিতে হবে।
৩. নিয়মিত নগদ অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করলে মুনাফা অর্জন কি সম্ভব?
উত্তরঃ নিয়মিত নগদ একাউন্ট ব্যবহার করলে মুনাফা অর্জন সম্ভব হবে। তবে অবশ্যই আপনার একাউন্টে ১০০০ টাকা রাখতে হবে এবং সেই সঞ্চয়ের উপর মুনাফা দেওয়া হবে।
৪. নগদ একাউন্ট থেকে মুনাফা পেতে চাইলে শর্তগুলো একান্ত প্রয়োজন আছে কি?
উত্তরঃ নগদ একাউন্ট কর্তৃক মুনাফা পেতে চাইলে অবশ্যই পূর্ববর্তী শর্তগুলো মেনে চলতে হবে তা না হলে আপনি কোন মুনাফা পাবেন না।
৫. নগদ গ্রাহকদের মুনাফা কোন হিসাবে দিয়ে থাকেন?
উত্তরঃ নগদ গ্রাহকদের সঞ্চয়ের পরিমাণের ওপর প্রদান করে থাকে। তাদের এই মুনাফিক হিসেবে হয়ে থাকলেও প্রতি মাসে তারা এক বছরের মুনাফা করে দিয়ে থাকে।
শেষ কথাঃ
যেসকল গ্রাহক নগদ মোবাইল ব্যাংকিং ওপেন করেছেন তাদের জন্য এই আর্টিকেলটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং এই আর্টিকেলটি তারা যদি পড়ে তাহলে তাদের খুবই উপকৃত হবে। কারণ নগদ একাউন্টে অর্থ সঞ্চয়ের ফলে মুনাফা অর্জন করা যায় সেটি অনেকে জানিনা। সেজন্যই কত টাকা জমা রাখলে কতটুকু মুনাফা পাওয়া যাবে সেই সম্পর্কিত তথ্য প্রদান করে আপনাদের উপকৃত করার চেষ্টা করেছি। এছাড়াও আপনারা যদি নগদ একাউন্ট সম্পর্কিত আরো কোন তথ্য জানতে চান তাহলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন। ধন্যবাদ।
Good post