দুধের সর দিয়ে ত্বকের যত্ন করা কি ঠিক?

বাংলাদেশে দুধের সর দিয়ে ত্বকের যত্ন কমবেশি অনেকেই করে থাকে। কিন্তু কথা হলো, দুধের সর দিয়ে ত্বকের কি আসলে কোন উপকার হয়? তার কি কোন বৈজ্ঞানিক ভিত্তি আছে? মুখরোচক খাবার তৈরিতে, দুধের সর ব্যবহৃত হয়। কিন্তু বেশ কয়েকজন এইটা দাবি করে যে, দুধের সর দিয়ে ত্বকের যত্ন খুব কার্যকরী একটি উপাদান হিসেবে ভূমিকা পালন করে। 
এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা এই ধরণের প্রশ্নের বৈজ্ঞানিক উত্তর দেয়ার চেষ্টা করবো। পাশাপাশি জানবো, কিভাবে দুধের সর ব্যবহার করা হয়? দুধের সরের উপকারিতা। দুধের সর ব্যবহারের নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত।

দুধের সর মূলত কি?

দুধের সর মূলত একটি পাতলা, হালকা হলুদাভাব এবং এক ধরণের ক্রিম। প্রায় ১৮০ ডিগ্রি তাপমাত্রায় দুধ গরম করার ফলে, দুধের উপরে এক ধরণের আস্তরণ পরে। অবশ্যই উপরের সরটা, দুধ ঠাণ্ডা করার কয়েক মিনিট বা ঘণ্টা পরে হয়। যা দুধের সর নামেই আমাদের সকলের কাছে পরিচিত। মূলত দুধের সর, প্রোটিন এবং ফ্যাটের উৎস হিসেবে কাজ করে থাকে।

দুধের সর দিয়ে ত্বকের যত্ন

কেন সবাই দুধের সর মুখে ব্যবহার করে? তা আমরা অনেকেই জানি না। যদিও এখনো কোন ধরণের ক্লিনিকাল রিসার্চ রিপোর্ট পাওয়া যায়নি, তবুও সকলে দুধের সরকে তাদের রূপচর্চার ক্ষেত্রে ব্যবহার করে আসছে। দুধের সর কয়েকটি কারণে ব্যবহার করে থাকে:
  • স্কিনকে মশ্চরাইজ করার ক্ষেত্রে।
  • স্কিন ব্রাইট করার জন্য।
  • স্কিন টোন উন্নত করার জন্য।
  • স্কিনের ইলাস্টিসিটি উন্নত করার জন্য।
দুধের সর ত্বকে ব্যবহার কি সত্যিই কাজে দেয়? তাহলে চলুন জেনে নিই, রিসার্চ রিপোর্টে কি বলা হচ্ছে।

রিসার্চে দেখা যায় যে, আমরা আমাদের স্কিনে যে দুধের সর ব্যবহার করে থাকি, সেই দুধের সরে মূলত ল্যাকটিক এসিড, আলফা হাইড্রোক্সি এসিড বিদ্যমান রয়েছে। আর এই উপাদানগুলো যে কাজে লাগে:
২০১৮ সালের MDPI আর্টিকেল অনুযায়ী, আলফা হাইড্রোক্সি এসিড, সূর্যের আলোর ইউভি রশ্মি থেকে স্কিন ড্যামেজ প্রতিরোধে সাহায্য করে থাকে বলে জানা গেছে।

ফুড এন্ড ড্রাগ এডমিনিস্ট্রেশন এর মতে, আলফা হাইড্রক্সি ত্বকের মৃত চামড়ার কারণে বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে থাকে। এফডিআর এর মতে, দুধের সরে পাওয়া উপাদানগুলো বাজারে থাকা অধিকাংশ কসমেটিকসেই ব্যবহার করা হয়।

দুধের সর কিভাবে ব্যবহার করতে হয়?

প্রথমত বলা যায় যে, দুধের সর দিয়ে ত্বকের যত্ন, একটি ফেসিয়াল মাস্ক হিসেবে কাজ করে থাকে। সাধারণ অনেকে দুধের সরকে সরাসরি ত্বকে ব্যবহারের পরামর্শ দিয়ে থাকে এভাবে:
  • প্রথমে ph এর মাত্রা কম এমন একটি ক্লিনজার দিয়ে মুখমুন্ডল ধুয়ে নিতে হবে।
  • আঙুলের নরম অংশ দিয়ে দুধের সর নিয়ে, আলতো ভাবে সারা মুখে লাগিয়ে নিতে হবে। 
  • মুখে লাগিয়ে ১০ থেকে ২০ মিনিট রাখতে হবে।
  • মুখ শুকিয়ে গেলে, হালকা গরম পানি দিয়ে মুখমুন্ডল ধুয়ে ফেলে নিতে হবে।
  • তারপর একটি পরিষ্কার টাওয়াল দিয়ে পুরো মুখ মুছে নিতে হবে।

অন্য উপাদানের সাথে দুধের সর মিশিয়ে ব্যবহার

রূপচর্চার ক্ষেত্রে, স্কিনের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির জন্য, যুগ যুগ ধরে ব্যবহার করে আসছে মধু, এলোভেরা, হলুদ এবং দুধ। গবেষণায় বলা হয়, নিম্নোক্ত উপাদানসমূহ আপনার স্কিনের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করতে ভূমিকা পালন করে থাকে।

মধু: Journal of Cosmetic Dermatology এর ২০১৩  সালের রিপোর্ট অনুযায়ী, মধু ত্বকের কালো দাগ দূর করে, ত্বককে উজ্জ্বল করে তুলে। এছাড়া, ত্বকের মধ্যে ভাজ পরা কিংবা কোমল করে।

এলভেরা: ২০১৪ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী, সামান্য পরিমাণে এলোভেরার আপনার স্কিনকে হাইড্রোইড করতে সাহায্য করে। কারণ এলোভেরাতে বিদ্যমান  রয়েছে এন্টি এরেন্থিন। এরেন্থিন ত্বকে বিভিন্ন ধরনের ইনফেকশন কিংবা ক্ষত থেকে সেরে ওঠার ক্ষেত্রে সাহায্য করে থাকে।

হলুদ: ২০১৬ সালের এক গবেষণা মতে, হলুদে এন্টিমাইক্রোবিয়াল বিদ্যমান রয়েছে, এন্টি ফেলমেন্টরি এন্টিঅক্সিডেন্ট। যা আমাদের ত্বক ভাল রাখে।

উপরের উপাদানগুলো আপনি দুধের সরের পাশাপাশি ব্যবহার করতে পারেন।

সর্তকতা

যদি আপনার স্কিনে কোন ধরণের এলার্জি জনিত সমস্যা থেকে থাকে, তাহলে আপনি দুধের সর ব্যবহার করলে এলার্জির তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা যেতে পারে। আপনি যদি জেনে না থাকেন যে, দুধের আপনার এলার্জি আছে কিনা?

তাহলে কোন ডাক্তার কিংবা ডার্মাটোলজিস্ট এর কাছে শরণাপন্ন হতে পারেন। ত্বকে যেকোনো ধরণের নতুন কোন পণ্য ব্যবহারের ক্ষেত্রে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। 

দুধের সর এবং বাজারের ক্রিমের মধ্যে কি ধরণের পার্থক্য

যেকোনো ধরনের সুপার-শপে দেখতে পাবেন হুইপ ক্রিম। হুইপ ক্রিম মূলত একটি খাদ্যসামগ্রী, যা বেকারি আইটেমে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। হুইপ ক্রিম একটি দুধ এবং ফ্যাটের সংমিশ্রণ।
হুইপ ক্রিম দুধের সরের মত বয়েল চুলায় দিতে হয় না, এতে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টির সংমিশ্রণ রয়েছে। কিন্তু দুধের সর ক্রিম কিংবা দুধের স্বরে প্রোটিন থাকলেও হুইপ ক্রিমে প্রোটিন নেই বললে চলে।

উপসংহার

পরিশেষে বলা যায়, দুধের সর দিয়ে ত্বকের যত্ন হয়তো প্রমানিত নয়, তবে দুধের সরে যে উপাদান থাকে সেইগুলো যে ত্বকের জন্য উপকারী তা কিন্তু প্রমানিত। সুতরাং, আপনার ত্বকে এলার্জি না থাকলে ফেসিয়াল প্যাক হিসাবে ব্যবহার করতে পারেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

জরিপ টোয়েন্টিফোর ডটকম এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url