ফ্রিল্যান্সার হওয়ার সুবিধা ও অসুবিধা

গতানুগতিক চাকরি যাদের পছন্দ নয়, তাদের জন্য ফ্রিল্যান্সিং হতে পারে স্বস্তির নিঃশ্বাস। তবে ফ্রিল্যান্সিং করে নিজের ইচ্ছামত কাজ করার স্বাধীনতার পাশাপাশি অনেক সুবিধার দিকে অতিরিক্ত নজর দিলে ভুল হবে। যেকোনো বিষয়ের মত ফ্রিল্যান্সিং এর ভালো ও খারাপ দিক রয়েছে।
এমনকি মজার বিষয় হলো ফ্রিল্যান্সিং এর সুবিধাগুলোই এর প্রধান অসুবিধা। অর্থাৎ এখানে ফ্রিল্যান্সিং এর সুবিধা-অসুবিধা একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ হিসেবে কাজ করে। এই পোস্টে ফ্রিল্যান্সার হওয়ার সুবিধা-অসুবিধা সম্পর্কে জানবেন।

সময়

একজন সাধারণ চাকুরের নিজের কাজের সময়ের উপর কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। চাকরিদাতা ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সুবিধামত সময়ে নিজের দায়িত্ব পালন করেন একজন গতানুগতিক চাকরি করা ব্যক্তি। এদিকে ফ্রিল্যান্সারগণ কাজ করেন প্রজেক্ট এর ভিত্তিতে, আবার নিজের কাজের সময় তিনি নিজেই ঠিক করতে পারেন। ডেডলাইন শেষ হওয়ার আগে কাজ শেষ করতে পারলেই হলো ফ্রিল্যান্সিং এর ক্ষেত্রে, নেই কোনো ধরাবাধা ওয়ার্ক আওয়ার। একজন ফ্রিল্যান্সিং নিজের ইচ্ছামত কাজ করার স্বাধীনতা রাখেন।

উদাহরণস্বরূপঃ একজন ফ্রিল্যান্সার এর কোনো প্রজেক্ট সাবমিট করার ডেডলাইন যদি শুক্রবার থাকে, তাহলে তিনি চাইলে সে কাজ বৃহস্পতিবার থেকেও শুরু করতে পারেন যা তার ব্যক্তিগত ইচ্ছা। আবার চাইলে তিনি পছন্দ না হলে কোনো কাজ নাও নিতে পারেন। অর্থাৎ নিজের কাজ বেছে নেওয়া বা করার ক্ষেত্রে একজন ফ্রিল্যান্সার অসাধারণ সুবিধা পেয়ে থাকেন।

কিন্তু নিজের এই স্বাধীনতার ভিড়ে সময়ের কাজ সময়ে না করার অভ্যাস তৈরী হয়। অনেক ফ্রিল্যান্সার রাতের ঘুম ত্যাগ করে ডেডলাইন মিট করতে রাতের বেলা কাজ করে থাকেন। আবার পরবর্তী কাজ কখন পাওয়া যাবে তা নিয়েও তেমন কোনো নির্দিষ্ট কিছু বলা যায়না ফ্রিল্যান্সিং এর ক্ষেত্রে। তাই ফ্রিল্যান্সিং এর ক্ষেত্রে কাজ বেছে নেওয়ার স্বাধীনতা একই সাথে একটি সুবিধা ও সমস্যা।

আয়

সাধারণ চাকরি ছেড়ে ফ্রিল্যান্সিং এর দিকে সবাই বেশি আগ্রহী হচ্ছে, যার কারণ হলো অর্থ। কমবেশি সবাই জানেন যে সাধারণ চাকরির চেয়ে ফ্রিল্যান্সিং করে অধিক আয় সম্ভব। কম কাজ করে অধিক আয় করা সম্ভব ফ্রিল্যান্সিং করে, যেখানে সাধারণ চাকরির ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ মাস অপেক্ষা করতে হয় বেতনের জন্য। আবার ফ্রিল্যান্সিং হিসেবে নিজের কাজের সম্মানি নিয়েও প্রজেক্ট শুরুর আগে আলোচনা করা যায়, যা চাকরির ক্ষেত্রে সম্ভব নয়।
তবে একইভাবে চাকরির অনেক সুবিধা পায়না ফ্রিল্যান্সারগণ। একজন ফ্রিল্যান্সার কাজ না করলে টাকা পান না, যেখানে চাকরির ক্ষেত্রে প্রয়োজনে ছুটি নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। আবার ইন্স্যুরেন্স বা রিটায়ারমেন্ট এর সুযোগ নেই ফ্রিল্যান্সিং এর ক্ষেত্রে। তাই একজন ফ্রিল্যান্সারের এসব বিষয় মাথায় রেখে চলতে হয়।

সরঞ্জাম

চাকরির ক্ষেত্রে নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠাতা সকল ধরনের প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম, যেমনঃ কম্পিউটার, ডেস্ক, চেয়ার, ইত্যাদি প্রদান করে থাকে। তবে আপনার সুযোগ সুবিধামত যা ইচ্ছা তা নির্বাচনের সুযোগ নেই, এসব সরঞ্জাম কোম্পানি-প্রদত্ত হওয়ায় এখানে আপনার মতামতের তেমন একটা প্রভাব থাকেনা।

অন্যদিকে একজন ফ্রিল্যান্সার তার প্রয়োজনীয় যেকোনো সরঞ্জাম এর ব্যবস্থা করতে পারেন। কাজের প্রয়োজনে বা শখের বসে নিজের জন্য শক্তিশালী কম্পিউটার ব্যবহার করতে পারেন একজন ফ্রিল্যান্সার যা দ্বারা কাজ করা ও শখ মেটানো উভয়ই করা যায়। এখানে বস এর কাছে কোনো বিষয়ে আপনার জবাবদিহিতা করতে হচ্ছেনা। হয়ত এখানে আপনার নিজের টাকা নিজের জন্যই খরচ হচ্ছে, কিন্তু এখানে আপনাকে বাধা দেওয়ার কেউ নেই ও আপনি নিজের সুবিধামত ওয়ার্কপ্লেস সাজাতে পারবেন।
একইভাবে এটি কিন্তু একটি অসুবিধা। একে তো আপনার প্রয়োজনীয় সকল সরঞ্জামের যোগান আপনার নিজেরই প্রদান করতে হবে, তার উপর একদম শুরুতে ফ্রিল্যান্সিং এর জন্য ইনভেস্ট নিজের পকেট থেকেই করতে হবে। আবার অফিসে কোনো সরঞ্জামে কোনো সমস্যা হলে তা পরিবর্তন বা ঠিক করার দায়িত্ব উক্ত কোম্পানির কিন্তু একজন ফ্রিল্যান্সারের ক্ষেত্রে যেকোনো সমস্যার সমাধান করার দায়িত্ব নিজের।

ক্লায়েন্ট

একজন সাধারণ চাকুরীজীবি কিন্তু কার জন্য কাজ করবেন তা নিজে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না। নিয়োগদাতা কোম্পানি যে কাজ দিবে সেই কাজ করার দায়িত্ব থাকে একজন সাধারণ কর্মচারীর জন্য। তাই কোনো প্রতিষ্ঠানে কর্মরত অবস্থায় ক্লায়েন্ট নির্বাচনের কোনো ক্ষমতাই কর্মচারীর থাকেনা।

অন্যদিকে একজন ফ্রিল্যান্সার তার নিজের ক্লায়েন্ট নিজেই বেছে নিতে পারেন। একজন ফ্রিল্যান্সার কার সাথে কাজ করবেন, তা সম্পূর্ণ তার নিজের ব্যাপার। আবার পছন্দ না হলে কোনো কায়েন্টকে না বলার ক্ষমতাও রাখেন একজন ফ্রিল্যান্সার। এছাড়া ক্লায়েন্ট খুঁজে পাওয়ার অগণিত উপায় ও মাধ্যম তো রয়েছেই।

আবার একইভাবে ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ার এর শুরুতে কাজ পেতে বেশ সমস্যা হবে। শুরুর দিকে ক্লায়েন্টকে কাজ দিতে রাজি করাতে বেশ বেগ পেতে হয়। তাই অনেকে ফ্রিল্যান্সিং শুরু করার কিছুদিনের মধ্যেই হাল ছেড়ে দেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

জরিপ টোয়েন্টিফোর ডটকম এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url