বাংলাদেশী ফ্রিল্যান্সিং সাইট

বাংলাদেশী ফ্রিল্যান্সিং সাইট: আমাদের অনেকের স্বপ্ন ফ্রিল্যান্সিং করার। আমরা সবাই জানি ফ্রিল্যান্সিং করতে হলে ইংরেজি ভাষা জানা দরকার। কিন্তু আমাদের ইংরেজি ভাষা জানা না থাকার কারণে ফ্রিল্যান্সিং করতে ভয় পাই। স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যায়। কিন্তু এখন আর কোন চিন্তা নেই। ইংরেজি ভাষা না জানলেও আপনি ফ্রিল্যান্সিং করতে পারবেন। তবে প্রয়োজন হবে আপনার দক্ষতা।
আমাদের মাঝে অনেকেই আছে যারা অনেক মেধাবী। কারিগরি কাজ গুলো ভালই করতে জানে। যেমন, ফ্রিল্যান্সিং করা। এ সকল কাজ ইংরেজি ভাষা না জানলেও করা সম্ভব। কিন্তু সেই রকম সুযোগ সচরাচর চোখে পড়ে না। তাই অনেকেই ফ্রিল্যান্সিং পেশাটাকে এড়িয়ে চলে।

যদি আপনার দক্ষতা এবং আত্মবিশ্বাস থাকে তাহলে আপনিও ফ্রিল্যান্সার হয়ে উঠতে পারবেন। আপনি নিজের দক্ষতাটাকে কাজে লাগান। বিশ্ববাজারে হয়তো ভাষার জন্য প্রাথমিকভাবে ভালো কাজ নাও পেতে পারেন। তাই দেশীয় ফ্রিল্যান্সিং ওয়েবসাইট গুলোতে আপনার মেধাকে কাজে লাগিয়ে অনলাইন থেকে ইনকাম করুন।

কেননা বাংলাদেশী ফ্রিল্যান্সিং ওয়েবসাইটগুলো আপনাকে বিভিন্ন ধরনের সুবিধা প্রদান করবে। ছোটখাটো কাজগুলো আপনি মোবাইল দিয়ে অনায়াসে করতে পারবেন। কীভাবে বাংলাদেশি ওয়েবসাইটে ফ্রিল্যান্সিং করবেন তা জানার জন্য সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন।

বাংলাদেশের ফ্রিল্যান্সিং ওয়েবসাইটে কাজ করার সুবিধা

বাংলাদেশে থাকার কারণে ফ্রিল্যান্সিং করার জন্য আমাদের বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। এর মধ্যে প্রধান দুটি সমস্যা হচ্ছে,
  • ১. যোগাযোগ।
  • ২. আর্থিক লেনদেন।
যোগাযোগ: ইংরেজি ভাষায় দক্ষ না হওয়ার কারণে বিদেশি বায়ারদের সাথে সঠিকভাবে যোগাযোগ করা সম্ভব হয় না। এর জন্য নানা ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়। একসময় হতাশ হয়ে আউটসোর্সিং ছেড়ে দিতে হয়।

আর্থিক লেনদেন: আউটসোর্সিং করতে গেলে পেমেন্ট নিয়ে বিরম্বনার সৃষ্টি হয়। কেননা বিদেশীরা পেপালের মাধ্যমে পেমেন্ট করে থাকে। বাংলাদেশে পেপাল সুবিধা নেই। এছাড়া অনেক কোম্পানি সরাসরি ব্যাংকে টাকা পাঠায়। আমাদের অনেকের কাছে আবার ব্যাংক একাউন্টও নেই।
কিন্তু বাংলাদেশী ফ্রিল্যান্সিং সংস্থায় কাজ করলে এই ধরনের কোনো সমস্যা সম্মুখীন হতে হবে না। কেন নাকের বেশিরভাগ কাজ গুলো বাংলাদেশের। তাই বাংলা ভাষাতেই আপনি যোগাযোগ করতে পারবেন।
এছাড়া পেমেন্ট নিয়ে কোনো চিন্তার কারণ নেই। কেননা তারা বিকাশ, রকেট বা যে কোনো দেশীয় ব্যাংকের মাধ্যমে পেমেন্ট করে দেবে।

বাংলাদেশী ফ্রিল্যান্সিং সাইট | Bangladeshi Freelancing Websites

বাংলাদেশীদের ফ্রিল্যান্সিং এর সুবিধার্থে কয়েকটা ফ্রিল্যান্সিং ওয়েবসাইট তৈরি হয়েছে। এগুলো তো আপনি খুব সহজেই আপনার প্রোফাইল ক্রিয়েট করতে পারবেন। যারা ফ্রিল্যান্সিং করতে চায় শুধুমাত্র তাদের জন্যই যে এই ওয়েবসাইট গুলো এমনটা নয়। যারা নিজস্ব প্রতিষ্ঠানের অনলাইন কাজগুলো করাতে চান তারাও এখান থেকে ফ্রিল্যান্সারদেরকে হায়ার করতে পারবেন। সেরা ৩ টি বাংলাদেশী ফ্রিল্যান্সিং ওয়েবসাইট:
নিচে ফ্রিল্যান্সিং ওয়েবসাইট গুলোর বিস্তারিত বর্ণনা করা হলো:

১. belancer. com

দেশে ফ্রিল্যান্সারদের কথা চিন্তা করে বাংলাদেশে ২০১৫ সালে একটি ফ্রিল্যান্সিং ওয়েবসাইট তৈরি হয়। যার নাম বিল্যান্সার। এই ফ্রিল্যান্সিং ওয়েবসাইটটির উদ্যোক্তা শফিউল আলম।

আজ অবদি অনেক জন ফ্রিল্যান্সার বিল্যান্সারে রেজিস্ট্রেশন করেছেন। এখন পর্যন্ত অনেকগুলো কাজ সম্পন্ন হয়েছে। প্রায় কয়েক কোটি টাকা উপার্জন করেছে ফ্রিল্যান্সাররা।

বিল্যান্সারে কাজ সন্ধান করা অনেক সহজ। আপনাকে প্রথমে এখানে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। এরপর প্রোফাইল তৈরি করতে হবে। আপনি কি ধরনের কাজ করতে পারদর্শী এবং কি ধরনের কাজ করতে চান সেগুলো উল্লেখ্য করতে হবে। এরপর আপনাকে কাজ দেওয়া হবে।

এখানে আরো একটি বিশেষ সুবিধা রয়েছে। শুধুমাত্র যে বাংলাদেশের কাজ করবেন এমন নয়। বিদেশ থেকেও বিভিন্ন প্রজেক্ট আনার চেষ্টা চলছে। বিদেশে কাজগুলোর প্রাইস অনেক বেশি হয়ে থাকে, তাই ফ্রিল্যান্সারদের ইনকাম আরো বেশি হবে। বিল্যান্সার ওয়েবসাইটে যে সকল কাজের চাহিদা বেশি:
  • সেলস ও মার্কেটিং
  • মোবাইল অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট
  • কনটেন্ট রাইটিং ও ট্রান্সলেশন
  • ডিজাইন এবং মাল্টিমিডিয়া
  • ওয়েবসাইট ডেভলপমেন্ট
  • সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট

পারিশ্রমিক পাওয়ার নিশ্চয়তা

কোনো প্রতিষ্ঠান যদি এই ওয়েবসাইট থেকে কাজ করিয়ে নিতে চায় তাহলে সে বিজ্ঞাপন দেয়। বিজ্ঞাপন দিতে গেলে ওই কাজের সমপরিমাণ মূল্য অগ্রিম প্রদান করতে হয়। কোন ফ্রিল্যান্সার যদি সেই কাজ সম্পন্ন করতে পারে তাহলে ফ্রিল্যান্সারকে সরাসরি টাকা হস্তান্তর করা হয়। পারিশ্রমিক পাওয়া নিয়ে কোনো দুশ্চিন্তার কারণ নেই।

বিল্যান্সার ওয়েবসাইট উভয়পক্ষ কাছ থেকে অতি অল্প শতাংশ কমিশন গ্রহণ করে। পূর্বে বলা হয়েছে পেমেন্ট মাধ্যম খুবই সহজ। আপনার হাতের কাছে যে কোনো দেশীও ব্যাংক একাউন্টে টাকা হস্তান্তর করা হবে। অথবা আপনি যদি চান ইলেকট্রিক মানি ট্রান্সফার অর্থাৎ বিকাশ, রকেট এর মাধ্যমে টাকা গ্রহণ করতে পারবেন।

২. shocchol. com

বাংলাদেশের ফ্রিল্যান্সিং সাইটের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে সচ্ছল ডট কম। এটা অবশ্য ইদানিং প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু এরই মধ্যে বিপুল জনপ্রিয়তা এবং সাড়া পেয়েছে। সচ্ছল ডট কম এর মাধ্যমে হাজারো মানুষ ফ্রিল্যান্সিং করে সফল হয়েছে।

যারা ইংরেজি ভাষা নিয়ে চিন্তিত। ইংরেজি ভাষা না জানার জন্য কাজ পাচ্ছেন না। তাদের জন্য এটা একটি বেস্ট অপশন। এখানে খুব সহজেই আপনি আপনার দক্ষতা জাহির করতে পারবেন।
প্রথমে আপনাকে এই ওয়েবসাইটে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। রেজিস্ট্রেশন এর মাধ্যমে প্রোফাইল ক্রিয়েট করতে হবে। এরপর আপনার কাজের দক্ষতা ও কী ধরনের কাজ করতে চান তা প্রোফাইলে উল্লেখ্য করতে হবে। এখানে খুব সহজেই কাজ পাওয়া যায়।

ফ্রিল্যান্সিং করার জন্য কোনো প্রতিষ্ঠানিক শিক্ষাগত যোগ্যতার প্রয়োজন নেই। আপনি অনলাইনে কাজ করার দক্ষতা কে কাজে লাগিয়েই লাখ টাকা ইনকাম করতে পারবেন। স্বচ্ছল ওয়েবসাইটে যে সকল কাজের চাহিদা বেশি:
  • ওয়েব ডেভেলপমেন্ট
  • গ্রাফিক্স ডিজাইন
  • মোবাইল অ্যাপ ডেভেলপমেন্
  • ভিডিও তৈরি, এডিটিং ও এনিমেশন
  • ভার্চুয়াল এসিস্ট্যান্ট
  • ডিজিটাল মার্কেটিং
  • কাস্টমার কেয়ার
  • কনটেন্ট রাইটিং
  • অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট
  • ডাটা এন্ট্রি
পারিশ্রমিক প্রদানের মাধ্যম: অন্যান্য দেশীয় ফ্রিল্যান্সিং ওয়েবসাইট এর মতো এখানেও দেশীয় ব্যাংক এর মাধ্যমে টাকা প্রদান করা হয়। এছাড়া বিকাশ, রকেট এর সুবিধা তো রয়েছেই।

৩. kajkhuji.com.bd

এই ফ্রিল্যান্সিং ওয়েবসাইট সবগুলো থেকে ভিন্ন। কাজখুঁজি ফ্রিল্যান্সিং ওয়েবসাইট সম্পূর্ণ বাংলা ভাষায় ডিজাইন করা হয়েছে। যারা ইংরেজি ভাষাকে ভয় পান, ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা নেই, তাদের জন্য এই ওয়েবসাইটটি খুবই কার্যকরী। কাজখুঁজির প্রতিটা বিষয় বাংলায়। তাই বাংলা ভাষীদের জন্য ফ্রিল্যান্সিং করা এখন হয়ে উঠবে আরো সহজ।
বাংলাদেশের অন্যান্য ফ্রিল্যান্সিং ওয়েবসাইট এর মতো এখানেও রেজিস্ট্রেশন এর মাধ্যমে প্রোফাইল ক্রিয়েট করতে হবে। আপনার কাজের দক্ষতা ও চাহিদা উল্লেখ্য করতে হবে। এরপর আপনাকে বিভিন্ন কাজের অফার দেওয়া হবে।

আপনার কাজের পারফরম্যান্স যদি ভাল হয় তাহলে এখানে রেটিং এর ব্যবস্থা রয়েছে। যত ভালো কাজ করবেন তত রেটিং বাড়বে। রেটিং বাড়ার সাথে সাথে কাজের পারিশ্রমিকও বৃদ্ধি পাবে।
বাংলাদেশের কাজখুঁজি ফ্রিল্যান্সিং ওয়েবসাইটে যেসব কাজের চাহিদা সবচেয়ে বেশি:
  • ওয়েব ডেভেলপমেন্ট
  • লোগো ডিজাইন
  • ভিডিও এডিটিং
  • অ্যাপ/সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট
  • গুগল অ্যাডসেন্স
  • গ্রাফিক্স ডিজাইন
  • অ্যানিমেশন
  • ডিজিটাল মার্কেটিং
  • কন্টেন্ট রাইটিং
খুব সহজেই আপনি আপনার পারিশ্রমিক পেয়ে যাবেন। দেশীয় যেকোনো টাকা হস্তান্তর মাধ্যমে আপনি টাকা পাবেন।

বাংলাদেশের ফ্রিল্যান্সিং সাইটে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানদের যেসব সুবিধা:

যেহেতু আপনি দেশীয় ব্যবসায়ী তাই আপনার কাজগুলো হবে বাংলা ভাষায়। আপনি বাংলা ভাষায় ফ্রিল্যান্সারদেরকে আপনার চাহিদা স্পষ্টভাবে বলতে পারবেন এবং ফ্রিল্যান্সাররাও সুন্দরভাবে আপনার চাহিদার কথা বুঝতে পারবে। এইজন্য আপনারা একটু বাড়তি সুবিধা পাবেন।

দেশের বাইরের ফ্রিল্যান্সারদের কাজের পারিশ্রমিক অনেক বেশি। তাই আপনার বাজেটের মধ্যে কাজ নাও হতে পারে। কিন্তু দেশীয় ফ্রিল্যান্সাররা সেই তুলনায় খুব কম পারিশ্রমিক দাবি করে। এই জন্য দেশীয় ফ্রিল্যান্সারদেরকে দিয়ে কাজ করান এবং দেশের বেকারত্ব নিরসনে অংশগ্রহন করুন।

বাংলাদেশী ফ্রিল্যান্সিং সাইট নিয়ে কিছু কথা

ফ্রিল্যান্সিং ওয়েবসাইট গুলো আয় করার বৃহত্তম মার্কেটপ্লেস। ফ্রিল্যান্সাররা যে শুধুমাত্র নিজেরাই টাকা ইনকাম করে এমনটা নয়। প্রতিবছর শত কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা এই ফ্রিল্যান্সারদের মাধ্যমেই দেশে আসে। ফলে দেশের রাজস্বের বিরাট অংশ ফ্রিল্যান্সারদের দ্বারাই পূর্ণ হয়। তাই ফ্রিল্যান্সিং পেশাকে ছোট করে দেখার কোনো অবকাশ নেই। দেশের বেকার যুবকেরা যাতে সহজে ফ্রিল্যান্সিং করতে পারে সেই ব্যবস্থা করতে হবে।

আপনি জেনে অবাক হবেন যে বিশ্বের সকল ফ্রিল্যান্সারদের মধ্যে বাংলাদেশী ফ্রিল্যান্সাররা সর্বাগ্রে এগিয়ে আছে। যারা Fiverr, Upwork, Freelancer এই ওয়েবসাইটগুলোতে কাজ করেছেন বা কাজ করতে চাচ্ছেন, তারা যদি এইসব ওয়েবসাইটের পাশাপাশি দেশীয় ফ্রিল্যান্সিং ওয়েসাইটগুলোতেও কাজ করেন, তাহলে দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলোও দেশেই তাদের কাজ করাতে আগ্রহী হবে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

জরিপ টোয়েন্টিফোর ডটকম এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url