উদ্যোক্তা হওয়ার উপায়-সফল উদ্যোক্তা হওয়ার উপায়
সফল উদ্যোক্তা হওয়ার উপায় হলো জ্ঞান ও দক্ষতা থাকা অর্থাৎ আপনি যে ব্যবসায়িই করেন না কেন সেই ব্যবসা সম্পর্কে খুঁটিনাটি থেকে শুরু করে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আপনার জানা থাকতে হবে। অর্থাৎ সে ব্যবসা সম্পর্কে আপনার জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জন করতে হবে। যেন ওই ব্যবসা সম্পর্কে আপনার পরিপূর্ণ অভিজ্ঞতা থাকে।
আজকের এই আর্টিকেলটি লেখা হয়েছে সফল উদ্যোক্তা হওয়ার উপায় নিয়ে। যারা সফল উদ্যোক্তা হতে চান তারা নিচের উপায় গুলো জেনে নিন। চলুন জেনে নেওয়া যাক, একজন সফল উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য আপনাকে কি কি করতে হবে।
পোস্ট সূচিপত্র:
- সুস্পষ্ট লক্ষ্য স্থির ও কঠোর পরিশ্রম
- সুনির্দিষ্ট কাজ সম্পর্কে ভালো জ্ঞান ও দক্ষতা
- প্রচুর পরিশ্রম করতে হবে
- সফল উদ্যোক্তা হওয়ার মূলমন্ত্র হলো পরিকল্পনা করা
- আয়-ব্যয়ের হিসাব রাখুন
- গ্রাহকদের সাথে ভালো ব্যবহার
- ঝুঁকি গ্রহণ ও কৌশলী
- নেতৃত্ব দেওয়া
- অর্থ ব্যবস্থাপনা ও হিসাব
- গ্রাহকদের সাথে সম্পর্ক স্থাপন ও অভিযোগ গ্রহণ
- আত্মবিশ্বাস ও ব্যর্থতার জন্য প্রস্তুত থাকা
- উদ্যোক্তা হওয়ার উপায় নিয়ে শেষ কথা
সুস্পষ্ট লক্ষ্য স্থির ও কঠোর পরিশ্রম
উদ্যোক্তা হিসেবে সফল হতে আপনাকে অবশ্যই সুস্পষ্ট লক্ষ্য স্থির করতে হবে। প্রতিটি কাজের ক্ষেত্রেই এটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। একজন সফল উদ্যোক্তা তার লক্ষ্যের প্রতি স্থির থাকেন এবং সে লক্ষ্য মাথায় রেখে কঠোর পরিশ্রমের সাথে সুনির্দিষ্ট কিছু কাজের মাধ্যমে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন। অর্থাৎ লক্ষ্যে পৌছার জন্য যত ধরনের বাধাই আসুক না কেন তা মেনে নিয়ে কঠোর পরিশ্রম করতে হবে।
সুনির্দিষ্ট কাজ সম্পর্কে ভালো জ্ঞান ও দক্ষতা
আপনি যে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করবেন সে সম্পর্কে পরিপূর্ণ জ্ঞান বা দক্ষতা থাকতে হবে।প্রয়োজন হলে সে কাজে অভিজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে ভালোভাবে শিখুন তাতে করে আপনি অভিজ্ঞ হয়ে উঠবেন এবং পরবর্তীতে আপনি নিজের প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় সফল হবেন।
প্রচুর পরিশ্রম করতে হবে
অর্থাৎ রূপকথার আলাদিনের চেরাগের মত কোন কিছুই এমনি এমনি আসবে না বরং প্রচুর পরিশ্রম করতে হবে। আমরা যে বড় বড় ব্যক্তিকে দেখতে পাই অথবা সফলতম কোন মানুষকে দেখতে পাই।শুধু তাদের সফলতাকে দেখতে পাই কিন্তু তাদের পরিশ্রমকে দেখিনা।
তাদের সফলতার পিছনে কত রাতের যে পরিশ্রম রয়েছে সেটা আমরা বুঝার চেষ্টা করি না অথবা জানার চেষ্টাও করি না। সফলতা এমনি এমনি আসবে না বরং প্রচুর পরিশ্রম করতে হবে। বিশেষ করে একজন সফল উদ্যোক্তা হতে হলে আপনাকে পরিশ্রম করতে হবে। পাশাপাশি ধৈর্য ধারণ করতে হবে।
অর্থাৎ বিভিন্ন বিপদ- আপদের সময় আপনাকে ধৈর্য ধারণ করতে হবে এবং ঐ বিপদ-আপদ কে হিম্মতের সাথে দূর করতে হবে। তাহলে সফলতা একদিন আপনার কাছে ধরা দিবেই।
সফল উদ্যোক্তা হওয়ার মূলমন্ত্র হলো পরিকল্পনা করা
অধিকাংশ মানুষের ব্যবসায় অসফল হওয়ার কারণ হচ্ছে পরিকল্পনার অভাব। তারা দিনের পর দিন ব্যবসা করছেন কোনো পরিকল্পনা ছাড়াই। যার ফলে সফল হতে পারেনা। তাই আপনাকে ব্যবসার শুরুতেই পরিকল্পনা করতে হবে।
অর্থাৎ কি ব্যবসা করবেন ? কিভাবে ব্যবসা করবেন ? ক্রেতা কারা হবে ? কী কী কৌশল অবলম্বন করবেন ? ইত্যাদি বিষয়ে আপনাকে পরিকল্পনা করতে হবে।
আয়-ব্যয়ের হিসাব রাখুন
আপনার ব্যবসায় প্রত্যেকটি আয় এবং ব্যয়ের হিসাব রাখুন এবং যে সমস্ত জায়গায় অতিরিক্ত ব্যয় হয় কোন প্রয়োজন ছাড়া ঐ সমস্ত ব্যয়কে বন্ধ করুন। এর ফলে আপনার ব্যবসা আস্তে আস্তে উন্নতি লাভ করবে। আর এই হিসাব রাখার দ্বারা আপনার ব্যবসায় কতটুকু লাভ হচ্ছে কতটুকু ক্ষতি হচ্ছে এই সমস্ত বিষয়ে আপনার জানা থাকবে।
গ্রাহকদের সাথে ভালো ব্যবহার
আপনি যদি সফল উদ্যোক্তা হতে চান তাহলে অবশ্যই আপনার গ্রাহকদের সাথে ভালো ব্যবহার করতে হবে তাদের বিভিন্ন বিষয়ে সাহায্য করতে হবে। গ্রাহকদের সাথে একটি সম্পর্ক স্থাপন করুন। তাহলেই আপনি সফল হতে পারবেন খুব দ্রুত।
ঝুঁকি গ্রহণ ও কৌশলী
যেকোনো কাজের ক্ষেত্রে আপনাকে কৌশলী হতে হবে এবং ঝুঁকি গ্রহণের মনোভাব থাকতে হবে। ক্রেতাদের অবস্থা ও বাজারের চাহিদা অনুযায়ী, ব্যবসা করতে হবে। অর্থাৎ ক্রেতাদের ক্রয় ক্ষমতা ও বাজারে যে পণ্যের চাহিদা রয়েছে সে পণ্য নিয়ে ব্যবসা করতে হবে। আপনার প্রতিদ্বন্দ্বীরা বাজারে কী পণ্য নিয়ে আসছে সেগুলো খেয়াল রাখুন। সবকিছুর বিবেচনায় আপনাকে ঝুঁকি নিয়ে উৎপাদন করতে হবে। যখন দেখবেন লাভের পরিমাণ বেশি এবং ঝুঁকির পরিমাণ কম তখন ঝুঁকি নেওয়াটাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ।এটাই সফল উদ্যোক্তা হওয়ার উপায়।
নেতৃত্ব দেওয়া
একজন সফল উদ্যোক্তা হতে হলে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়ার গুণাবলি থাকতে হবে। একজন মানুষ সকল বিষয়ে পারদর্শী হয় না। এক্ষেত্রে টিম গঠন করে সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ করতে হবে এবং টিম পরিচালনায় দক্ষ হতে হবে। একজন সফল উদ্যোক্তাকে নিজে যেমন নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন, তেমনি অন্যদেরও সঠিক পথে পরিচালনা করেন। কাকে কি বললে সে ভালো কাজ করবে— তা খুব সহজেই ধরতে পারেন এবং সেই অনুযায়ী, আচরণ করতে পারেন। কর্মীদের ভেতর থেকে তাদের সেরাটা বের করে আনার সহজাত ক্ষমতা একজন সফল উদ্যোক্তার রয়েছে।
অর্থ ব্যবস্থাপনা ও হিসাব
একটি নতুন উদ্যোগ লাভের মুখ দেখতে বেশ কিছুটা সময় লাগে। এ লাভ আসার আগ পর্যন্ত হাতে থাকা অর্থ সঠিকভাবে ব্যবহার করতে হবে। প্রয়োজনে যে সমস্ত জায়গায় অতিরিক্ত ব্যয় হয় সে সকল ব্যয় বন্ধ করুন এবং আপনার প্রতিষ্ঠানের প্রত্যেকটি আয় ব্যয়ের হিসাব রাখুন। এর ফলে কতটুকু লাভ হচ্ছে বা ক্ষতি হচ্ছে তা জানা যাবে।
গ্রাহকদের সাথে সম্পর্ক স্থাপন ও অভিযোগ গ্রহণ
গ্রাহকদের সাথে আন্তরিকতার সাথে কথা বলে ও হাসিমুখে তাদের অভিযোগ গ্রহণ করে যত দ্রুত সম্ভব সেগুলোর সমাধান দিতে হবে। এতে করে গ্রাহকদের সাথে আপনার ও আপনার প্রতিষ্ঠানের একটি সু-সম্পর্ক স্থাপন হবে। গ্রাহকদের সাথে সম্পর্ক স্থাপনের ক্ষেত্রে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারে আপনাকে পারদর্শী হতে হবে।
আত্মবিশ্বাস ও ব্যর্থতার জন্য প্রস্তুত থাকা
নিজের ক্ষমতা ও যাবতীয় গুণাবলির ওপর পরিপূর্ণ আস্থাশীল ও বিশ্বাস স্থাপন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আপনাকে বিশ্বাস অর্জন করতে হবে যে, সব বাধা অতিক্রম করেই আপনি আপনার লক্ষ্যে পৌঁছবেন। সফল উদ্যোক্তারা তাদের কাজকে উপভোগ করেন, সেকারণে তারা অক্লান্ত পরিশ্রম করে যান ।
তাছাড়া কোনো কাজের ক্ষেত্রে সফলতা ও ব্যর্থতা দু’টোই থাকে। আপনার ব্যবসার ক্ষেত্রে ব্যর্থতা আসতেই পারে। এ ব্যর্থতাকে মেনে নিয়ে আপনাকে সামনে এগিয়ে যেতে হবে। সফল উদ্যোক্তা হতে হলে আপনাকে অবশ্যই ওপরে উল্লেখিত বৈশিষ্ট্যগুলো অর্জন করতে হবে। সততার সাথে নিজেকে দক্ষ ও যোগ্য করে গড়ে তুলুন। দেখবেন সবকিছুই সহজ মনে হচ্ছে।
উদ্যোক্তা হওয়ার উপায় নিয়ে শেষ কথা
Clayton M Cristensen ছিলেন একজনআমেরিকান অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়িক পরামর্শদাতা। তার লেখা The Innovator’s Dilemma ব্যবসা ক্ষেত্রে একটা ক্লাসিক বই। এ বইতে দেখানো হয়েছে বড় বড় প্রতিষ্ঠান শিল্প ও প্রযুক্তির বারবার পরিবর্তনের বাজারে দীর্ঘ সময়ের জন্য তাদের নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে পারে না।
তিনি এ বইতে আরো বলেন যদি কোনো কোম্পানির সম্পদ, কার্যধারা ও মান বাজার উপযোগী না হয় তবে কোনো কিছুই সে কোম্পানিকে টিকিয়ে রাখতে পারে না । উদ্যোক্তাদের বইটি অবশ্যই পড়া উচিত। তাহলে বাজারে বড় প্রতিদ্বন্দ্বীদের কীভাবে মোকাবিলা করতে হয় সেটা তাঁরা বুঝতে পারবেন।
This comment has been removed by the author.
Nice
thanks