টমেটোর উপকারিতা ও অপকারিতা

টমেটোর উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানতে এই আর্টিকেলটি পড়ুন। টমেটো একটি সুস্বাদু ও পুষ্টিকর সবজি। টমেটো শীতকালীন সবজি হলেও এখন সারা বছর পাওয়া যায়। কাঁচা কিংবা পাকা দুভাবে টমেটো খাওয়া যায়। খাবারের স্বাদ বাড়াতে টমেটোর জুড়ি নেই। অনেকে আবার সালাদ হিসেবে টমেটো খেয়ে থাকেন। টমেটো শুধু খাবারে স্বাদই বাড়ায় না, টমেটো থেকে তৈরি হয় নানা রকমের কেচাপ, সস।
সাধারণত টমেটো সবজি হিসেবে বিবেচিত কিন্তু টমেটো আসলে এটা ফল। টমেটোকে ফল বা সবজি বলা হয়। টমেটো পুষ্টিতে ভরপুর। টমেটো শুধু পুষ্টিকরই নয়, খাবারের স্বাদ বাড়ার পাশাপাশি স্বাস্থ্যকরও। প্রতিদিন খাবারে সাথে টমেটো যুক্ত করলে আমাদের শরীর অনেক রোগের বিরুদ্ধে লড়তে পারে।

টমেটোর বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে, এর উপকারিতা অসংখ্য, তাই আয়ুর্বেদে ওষুধ হিসেবে টমেটো ব্যবহার করা হয়। আসুন টমেটোর বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে জেনে নেওয়া যাক যে এটি বিভিন্ন রোগের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কিভাবে কার্যকরী।
সাধারনত টমেটো সবজি হিসেবে ধরে নেওয়া হলেও মানুষ শুধু খাবারের স্বাদ পেতে টমেটো ব্যবহার করে কিন্তু টমেটোর কিছু ঔষধি উপকারিতা রয়েছে। আসুন টমেটো সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জেনে নিই।

লাল টমেটো লম্বা, খাড়া, বিশেষ গন্ধযুক্ত, কাঁটাবিহীন, ভেষজ উদ্ভিদ। এর পাতাগুলি প্রান্তে অসমভাবে কাটা, সামনের দিকে নির্দেশিত এবং সবুজ রঙের। এর ফুল প্রায় ১.৬ সেন্টিমিটার ব্যাস বা ব্যাস হলুদ বর্ণের। এর ফল কাঁচা অবস্থায় সবুজ, পাকা অবস্থায় লাল, মাংসল, ব্যাস ১.৩-৬ সেমি, গোলাকার, চকচকে। বীজ চ্যাপ্টা, গোলাকার এবং কিডনি আকৃতির। সেপ্টেম্বর থেকে মার্চ মাসে এটি বেশি ফুলে ওঠে।

খাবারকে সুস্বাদু করার পাশাপাশি লাল টমেটো শরীরের শক্তি জোগায়। টমেটোর ফল অম্লীয় প্রকৃতির, মিষ্টি, খাবার দ্রুত হজম করতে সাহায্য করে, শক্তি বাড়ায়, জীবাণুনাশক, রক্ত ​​পরিশোধন করে।

পোস্ট সূচিপত্র:

টমেটোর খাওয়ার উপকারিতা

টমেটো খাওয়ার উপকারিতা অনেক। পোস্টের এই অংশে, আমরা টমেটোর উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করতে চলেছে, তবে তার আগে আমরা এটি পরিষ্কার করতে চাই যে টমেটো কোনও গুরুতর রোগের নিরাময় নয়। এটি শুধুমাত্র কিছু পরিমাণে তাদের উপসর্গ কমাতে পারে। ভিটামিন সি, ভিটামিন কে, ভিটামিন এ, পটাসিয়াম, নিয়াসিন, ভিটামিন বি৬, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, কপার ইত্যাদি লাল টমেটোতে পাওয়া যায়। যা অনেক রোগের সাথে লড়াই করতে সাহায্য করে।  চলুন এবার জেনে নিই, টমেটো খাওয়ার উপকারিতাঃ

অ্যাজমা নিয়ন্ত্রণেঃ টমেটোর মধ্যে রয়েছে লাইকোপেন এবং ভিটামিন এ। যা অ্যাজমা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এই রোগকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে তাই নিয়মিত টমেটো খেতে পারেন।

হেপাটাইটিসের নিরাময়েঃ টমেটোর জুড়ি নেই, টমেটো, সেলারি, গাজর এবং চাল। এ ছাড়া, পরিমাণমতো লবণ দিয়ে একটি ডিশ তৈরী করে নিতে পারেন। এই ডিশ হেপাটাইটিসের নিরাময়ে খুব কার্যকর ভূমিকা পালন করে।
উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণেঃ উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা যে কোন রোগীর জন্য অনেক কঠিন একটা সমস্যা। তাই এখন থেকে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে একটি বা দুটি টমেটো খাবেন। সাথে কিছু চিনিও মিশিয়ে নিতে পারেন। এটি উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে অনেক ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে সাহায্য করবে।

চর্মরোগ নিরাময়েঃ চর্মরোগের জন্য টমেটো অত্যন্ত কার্যকারী একটি উপাদান। আপনার ত্বকে যদি কোনো সমস্যা হয়ে থাকে। তাহলে টমেটোর ব্যবহার করে দেখতে পারেন। আশা করি উপকার পাবেন। চর্মরোগ নিরাময়ে টমেটোর রস একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে কাজ করে থাকে। একটি টাটকা টমেটো নিয়ে তার রস করে। তারপর সে রস ত্বকের যে স্থানটি রোগাক্রান্ত সেখানে মাখিয়ে রাখুন। এভাবে দিনে দুই থেকে তিনবার মাখিয়ে রাখলে। দেখবেন আপনার সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।

টমেটো গলা ফোলা কমায়ঃ ঠাণ্ডার কারণে গলা ব্যথা হলে লাল টমেটো ফলের ক্বাথ তৈরি করে ১০-৩০ মিলি পরিমাণে পান করলে মুখ ও গলার ফোলাভাব দূর হয়।

মাড়ি থেকে রক্তপড়া থেকে মুক্তি পেতে টমেটোর উপকারিতাঃ টমেটোর রস বা জুস এবং জলের মিশ্রণ মাড়ি থেকে গার্গলিং করলে রক্তপাত কম হয়।

টমেটোর রস শ্বাসকষ্টে উপকারীঃ শ্বাসকষ্টের রোগে এভাবে লাল টমেটোর রস খাওয়া খুবই উপকারী। ১০ থেকে ১৫ মিলি টমেটো ফলের রস বা টমেটোর স্যুপ এক চামচ হরিদ্রার সাথে মিশিয়ে খেলে শ্বাসকষ্টের উপশম হয়।

ক্ষুধা কমানোর জন্য টমেটোর উপকারিতাঃ কোনো রোগের কারণে খাওয়ার ইচ্ছা না থাকলে নিম্নোক্ত উপায়ে লাল টমেটো খেলে উপকার পাওয়া যায়। ৩০-৪০ মিলি টমেটো ফলের রস খেলে ক্ষুধা, পিপাসা এবং কোষ্ঠকাঠিন্যে থেকে উপকার পাওয়া যায়। এ ছাড়া টমেটো ফল ভাজলে তাতে শিলা লবণ ও কালো গোলমরিচের গুঁড়া মিশিয়ে খেলে খাওয়ার ইচ্ছা বেড়ে যায়।

কোষ্ঠকাঠিন্যে উপকারী টমেটোঃ কোষ্ঠকাঠিন্যে ভুগছেন? এভাবে লাল টমেটোর মিশ্রণ তৈরি করে সেবন করুন। ১০ মিলি টমেটো ফলের রস বা টমেটোর স্যুপে লবণ এবং কালো মরিচ মিশিয়ে খেলে বমি বমি ভাব, পিত্তজনিত রোগ, কোষ্ঠকাঠিন্য, গ্যাস্ট্রিক এবং অন্ত্রের জ্বালা রোগে উপকার পাওয়া যায়। এ ছাড়া ১০ থেকে ২০ মিলি ফলের রস চিনির সঙ্গে মিশিয়ে খেলে কোষ্ঠকাঠিন্যে উপশম হয়।

ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোমের সাথে কাজ করেঃ আপনি যদি সবসময় পেট খারাপের সমস্যায় ভুগে থাকেন। তাহলে লাল টমেটো খান। টমেটো ফল মাঝখান থেকে কেটে ১-২ গ্রাম কুইন্স পাউডার দিয়ে খাওয়ালে ডায়রিয়া এবং ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোমে থেকে উপকার পাওয়া যায়।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়ক টমেটোঃ আজকের লাইফস্টাইলের ফল হলো ডায়াবেটিস। ডায়াবেটিসে উপকারী রস টমেটো বা স্যুপ টমেটো নিয়ন্ত্রণ নিতে প্রমাণ করে। টমেটোর রস খেলে ডায়াবেটিসে উপকার পাওয়া যায়।

টমেটো আর্থ্রাইটিস থেকে মুক্তি দেয়ঃ টমেটো পাতা সিদ্ধ, পিষে ও লাগালে বাত ও বাত রোগ থেকে উপকার পাওয়া যায়।

জয়েন্টের ব্যথায় টমেটো উপকারীঃ আজকাল সব বয়সের মানুষই জয়েন্টের ব্যথায় ভুগে থাকেন। টমেটোর মূল এবং পাতা ব্যথা নিরাময় করতে সাহায্য করে। মূল ও পাতার সিদ্ধ তেল জয়েন্টে লাগালে ব্যথা ও মচকে উপশম হয়।

ত্বকের রোগে টমেটোর উপকারিতাঃ ত্বক সংক্রান্ত রোগে টমেটো খুব কার্যকরী। টমেটো পাতা পিষে লাগালে ক্ষত, ছিদ্রজনিত প্রদাহ এবং ত্বক সংক্রান্ত অন্যান্য সমস্যা থেকে উপকার পাওয়া যায়।
ব্রণ বয়ঃ সব মেয়ে এবং ছেলেরা ব্রণ নিয়ে সমস্যায় থাকে। টমেটোর পাতা ও ফল পিষে লাগালে ব্রণ ও চর্মরোগ থেকে উপকার পাওয়া যায়।

মুখের দাগের জন্য টমেটোঃ মুখের দাগের সমস্যায় ভুগলে টমেটো কেটে মুখে মাখলে মুখের কালো দাগ সেরে যায়।

চুলের জন্য টমেটোঃ চুলের চকচকে ভাব আনতে চাইলে টমেটোর রস বা টমেটোর স্যুপে কর্পূর ও নারকেল তেল মিশিয়ে মাথায় লাগালে উপকার পাওয়া যায়।

দুর্বলতার সাথে লড়াই করতে সাহায্য করে টমেটোঃ ১০ থেকে ২০ মিলি টমেটো ফলের রস বা টমেটোর স্যুপে চিনি মিশিয়ে খেলে শারীরিক ও মানসিক দুর্বলতা, হতাশা এবং ঘুমের অভাবজনিত সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

জ্বর থেকে মুক্তির ইঙ্গিতকারী টমেটোঃ জ্বর থেকে মুক্তি পেতে চাইলে টমেটোর রস বা টমেটোর স্যুপ খেতে হবে। ১০ থেকে ১৫ মিলি টমেটোর রস খেলে জ্বর ও পিপাসা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

গর্ভাবস্থায় টমেটো উপকারীঃ গর্ভাবস্থায় টমেটোর ব্যবহার খুবই উপকারী। কারণ টমেটোতে ভিটামিন-সি-এর প্রধান উৎস এবং আয়রন প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়।

কাশি থেকে মুক্তি পেতে টমেটোর উপকারিতাঃ সর্দি-কাশি থেকে মুক্তি পেতে টমেটোর ব্যবহার খুবই কার্যকরি। কারণ টমেটোতে থাকা ভিটামিন-সি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে সর্দি-কাশির উপসর্গ কমাতে সাহায্য করে।

শিশুর বৃদ্ধির জন্য টমেটো উপকারীঃ শিশুদের বিকাশের জন্য টমেটোর ব্যবহার খুবই উপকারী। কারণ টমেটোতে পাওয়া ভিটামিন-সি এবং অন্যান্য পুষ্টি শিশুদের বিকাশে সাহায্য করে।
হাড়ের বৃদ্ধির জন্য টমেটো উপকারীঃ হাড়ের জন্য টমেটো খুবই উপকারী। কারণ টমেটোতে ক্যালসিয়ামের সাথে ভিটামিন ‘কে’ পাওয়া যায়, যা হাড় মজবুত করতে সাহায্য করে।

ওজন কমাতে টমেটোর উপকারিতাঃ ওজন কমাতে টমেটো খুবই উপকারী, কারণ টমেটোতে রয়েছে ৯৫ শতাংশ জলের উপাদান রয়েছে। সেই সঙ্গে এতে রয়েছে মূত্রবর্ধক উপাদান, যা শরীরের ময়লা দূর করে এবং ওজন কমাতে সাহায্য করে। টমেটোর রস স্থূলতা কমাতে সাহায্য করে।

টমেটোর দরকারী অংশ

আয়ুর্বেদে টমেটোর ফল ও পাতা সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয়।

কিভাবে টমেটো ব্যবহার করা উচিত?

প্রতিটি রোগের জন্য টমেটো খাওয়া এবং ব্যবহার করার পদ্ধতি সম্পর্কে ইতিমধ্যেই বলা হয়েছে। আপনি যদি কোনো বিশেষ রোগের চিকিৎসার জন্য টমেটো ব্যবহার করেন, তাহলে অবশ্যই একজন আয়ুর্বেদিক চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী- ১০ থেকে ২০ মিলি রস খাওয়া উচিত।

টমেটো খাওয়ার অপকারিতা

এর পাতা বিষাক্ত। ১০০ গ্রাম বা তার বেশি গ্রহণ করলে ধীর হৃদস্পন্দন, ব্যথা, খিঁচুনি, ডায়রিয়া, শ্বাস নিতে অসুবিধা, মাথাব্যথা, বমি এবং শ্বাস নিতে অসুবিধা।
সতর্কতা- পাইলস রোগীদের টমেটো খাওয়া উচিত নয়।
টমেটো কোথায় পাওয়া যায় বা জন্মায়?
এটি মূলত গ্রীষ্মমন্ডলীয় দক্ষিণ আমেরিকার পশ্চিম অঞ্চলে পাওয়া যায়, কিন্তু এখন বাংলাদেশের সর্বত্র চাষ করা হয়। এটি সবুজ শাক, টমেটো সস, সালাদ এবং টমেটো স্যুপ ইত্যাদির আকারে ব্যবহৃত হয়।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
5 জন কমেন্ট করেছেন ইতোমধ্যে
  • Ridoy
    Ridoy September 13, 2022 at 11:38 AM

    Nice post

  • Amirulshapla
    Amirulshapla September 14, 2022 at 12:56 AM

    wow so beautiful

    • jorip
      jorip September 15, 2022 at 6:44 AM

      ধন্যবাদ

  • Manik7575@gmail.com
    Manik7575@gmail.com September 14, 2022 at 1:23 AM

    Nice post

    • jorip
      jorip September 15, 2022 at 6:44 AM

      ধন্যবাদ

মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

জরিপ টোয়েন্টিফোর ডটকম এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url