ক্রেডিট কার্ড ও ডেবিট কার্ড নিরাপদ রাখার উপায়

ডিজিটাল যুগে প্রবেশের সাথে সাথে লেনদেনগুলো ক্রমেই ডিজিটাল হয়ে যাচ্ছে। আর তাই মোবাইল ব্যাংকিং, ক্রেডিট কার্ড ও ডেবিট কার্ড এর ব্যবহার বেড়ে চলেছে। নগদ টাকার ব্যবহার কমে আসছে, নতুন প্রজন্ম ঝুঁকছে অনলাইন ব্যাংকিং ও পেমেন্টের দিকে। এর সাথে বাড়ছে অনলাইনে প্রতারণার ঝুঁকি। বর্তমানে প্রায়ই নানা ধরণের প্রতারণার খবর পাওয়া যাচ্ছে। প্রতারকরা নতুন নতুন অভিনব পদ্ধতিতে প্রতারণা করছে। আর তার মধ্যে ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে প্রতারণা অন্যতম। 
ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ডের মাধ্যমে প্রতারণার ক্ষেত্রে প্রতারকরা বিভিন্নভাবে আপনার কার্ডের তথ্যগুলো জেনে নিতে চেষ্টা করে। এমনকি আজকাল কার্ড ক্লোন করবার মাধ্যমে টাকা উত্তোলনের ঘটনাও ঘটছে। তাছাড়া অনলাইনে বিভিন্ন ফিশিং সাইট তৈরির মাধ্যমে কার্ডের তথ্য চুরির ঘটনা ঘটছে। তাই এসকল বিষয়ে সতর্ক থাকা একান্ত জরুরী। কার্ড ব্যবহারের ক্ষেত্রে যেসব বিষয়ে বিশেষভাবে সতর্ক থাকা উচিত এবং যে সকল কাজগুলো করা উচিত সেগুলো নিয়ে এই আটিকেলে আলোচনা করবো।

কার্ডের তথ্য সুরক্ষিত রাখতে করণীয়

বর্তমানে অ্যাকাউন্টভেদে বিভিন্ন ব্যাংক বিভিন্ন ধরণের কার্ড প্রদান করে থাকে। সব থেকে জনপ্রিয় দুটি কার্ড হচ্ছে ভিসা এবং মাস্টারকার্ড। এছাড়াও অ্যামেক্স, ইউনিয়ন পে, নেক্সাস সহ বিভিন্ন ধরণের কার্ড আছে। প্রতিটি কার্ডেই থাকে একটি ১৫ বা ১৬ ডিজিটের নাম্বার, আপনার নাম, কার্ডের মেয়াদের তথ্য। এছাড়া কার্ডভেদে সামনে বা পিছনে ৩ বা ৪ ডিজিটের ভেরিফিকেশন কোড থাকে।
এগুলো প্রতিটি কার্ডের মাধ্যমে লেনদেনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। এই তথ্যগুলো একান্ত গোপনীয় এবং পিন নম্বরের মতোই কেউ এই তথ্যগুলো কোনো অবস্থাতেই জানতে চাইবে না, এমনকি ব্যাংক কর্মকর্তারাও না। মাঝে মধ্যে পরিচয় যাচাইয়ের জন্য কোথাও কোথাও ১৫ বা ১৬ ডিজিটের কার্ড নম্বরের শেষের ৩ টি ডিজিট জানতে চাইতে পারে। তবে কোনক্রমেই কাউকে কার্ডের পূর্ণ নম্বর দেবেন না।

মেয়াদের তারিখ অনেক সময় যাচাইয়ের জন্য জানতে চাইতে পারে ব্যাংকের সেবা নিতে গেলে। তবে ৩ বা ৪ ডিজিটের ভেরিফিকেশন কোড লেনদেন করার সময় ছাড়া কেউ কখনোই জানতে চাইবে না এবং কেউ এই তথ্য চাইলে কখনোই দেবেন না। প্রতিটি কার্ডেই ২ টি নিরাপত্তা স্তর থাকে। অনলাইনে লেনদেনের সময় উপরের সকল তথ্য প্রদান করার পরেও আপনার ফোন নম্বরে বা ইমেইলে ওটিপি প্রদান করা হতে পারে। এটি কখনোই কারো সাথে শেয়ার করবেন না। ওটিপি এর মাধ্যমে যাচাই করা হয় আপনার কার্ডের তথ্য আপনি নিজেই দিচ্ছেন কিনা লেনদেনের জন্য।

প্রতিটি কার্ডের ক্ষেত্রেই একটি গোপন পিন নম্বর থাকে। এই পিন নম্বর নিজের ইচ্ছামতো সেট করে নেয়া যায়। মুখস্ত রাখবার মতো পিন নম্বর দিন। আপনার পিন নাম্বার কাউকে বলবেন না। এমন কি ব্যাংকের কর্মকর্তা সেজে কেউ জানতে চাইলেও না, কেননা এটিও একান্ত ব্যক্তিগত তথ্য। পিন নম্বর শুধুমাত্র পিওএস মেশিন বা এটিএম ব্যবহারের সময় দরকার পড়বে। তাই এই দুই স্থান ব্যতীত পিন নম্বর কোথাও ব্যবহার করবেন না। তবে আপনার ব্যাংকের অ্যাপে login করতে গেলে বা ফোন কল সেন্টারে পিন ভেরিফাই করতে হতে পারে।

ব্যাংক ও কার্ড সংক্রান্ত কোনো কাগজ অনুমোদিত ব্যক্তি ছাড়া কারো সঙ্গে শেয়ার করবেন না। এগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নথি। সুতরাং নিরাপদ স্থানে এগুলো সংরক্ষণ করুন।

আপনার কার্ড ডুয়াল কারেন্সি হলে অর্থাৎ বাইরের দেশে লেনদেনের জন্য ব্যবহৃত হলে লেনদেনের সময় ছাড়া বাকি অন্য সময়ে ইউএসডি/ফরেইন কারেন্সি বন্ধ করে রাখুন। কেননা বাইরের দেশে অনেক ওয়েবসাইটেই শুধুমাত্র কার্ডের নাম, নম্বর, ভেরিফিকেশন কোড (সিভিভি) ও মেয়াদের তথ্য দিয়েই লেনদেন করে ফেলা সম্ভব। বাড়তি কোনো ভেরিফিকেশনের প্রয়োজন হয় না। তাই কার্ডের এই অংশ বন্ধ রাখলে অযাচিত চার্জ বা বিলের ঝুঁকি থাকবে না।

আপনি ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারকারী হলে অতিরিক্ত পেমেন্ট করবেন না অনাদায়ী বিল ছাড়া। এতে মানি লন্ডারিং ও টাকা আত্মসাতের মতো বিষয়ে জড়িত থাকার অভিযোগে অভিযুক্ত হতে পারেন।

এটিএম/ পিওএস টার্মিনাল ব্যবহারের সময় করণীয়

এটিএম বা পিওএস টার্মিনালে লেনদেনের সময় পিন প্রবেশের প্রয়োজন পরে। তবে এক্ষেত্রে সাবধান থাকা প্রয়োজন। আপনি যখন এই পিনটি প্রবেশ করাবেন তখন আশেপাশে খেয়াল রাখুন এবং পিন প্যাডটি ঢেকে পিন নম্বর প্রবেশ করান। সিকিউরিটি ক্যামেরা বা আশেপাশে কেউ যেন এই পিন দেখে ফেলতে না পারে ।
আপনার কার্ড অন্য কাউকে টাকা তুলতে দেবেন না। ATM or POS টার্মিনালে নিজের কার্ড নিজেই ব্যবহার করুন। বাইরে কেনাকাটায় কোন আউটলেটে কার্ড ব্যবহারের সময় কার্ডের দিকে সবসময় খেয়াল রাখুন যেন আপনার কার্ডের তথ্য অন্য কেউ দেখে না ফেলে। এটিএম বা পিওএস টার্মিনালে অনেক ধরণের ক্যামেরা ও ডিভাইস থাকে। এই ব্যাপারে সবসময় লক্ষ্য রাখুন। অনেক অসাধু কর্মচারী বা কর্মকর্তারা তথ্য চুরির মাধ্যমে কার্ড ক্লোন করতে পারে। তাই সকল ধরণের ডিভাইসের দিকে খেয়াল রাখুন।

অনলাইন/ই-কমার্স লেনদেনে করণীয়

  • অনলাইনে কেনাকাটার সময় পরিচিত ও জনপ্রিয় ওয়েবসাইট থেকে কেনাকাটা করুন। প্রতারকেরা কম মুল্যের বিভিন্ন অফারের প্রলোভন দেখিয়ে নিজেদের তৈরি ওয়েবসাইটের মাধ্যমে আপনার কার্ডের তথ্য চুরি করতে পারে। তাই সবসময় ভালো রিভিউ ও অনেক ক্রেতার কাছে জনপ্রিয় ওয়েবসাইটগুলোতেই শুধু আপনার কার্ডের তথ্য দিন।
  • তাড়াহুড়ো করে কেনাকাটা করা থেকে বিরত থাকুন। সবসময় দেখে নিবেন আপনি যে ওয়েবসাইটে প্রবেশ করছেন সেটি সঠিক ওয়েবসাইটই কিনা। ফিশিং করে তথ্য চুরির জন্য প্রতারকেরা ওয়েবসাইট ক্লোন করার মাধ্যমে আপনাকে ফাঁদে ফেলার চেষ্টা করতে পারে। এসব ওয়েবসাইটে কার্ডের তথ্য প্রবেশ করলে আপনার সকল তথ্য প্রতারকের কাছে চলে যাবে।
  • আপনার মোবাইলে বা ইমেইলে প্রতারকেরা বিভিন্ন ধরণের অফারের লোভ দেখিয়ে বিভিন্ন লিঙ্ক পাঠাতে পারে। এসব লিঙ্কে কখনই প্রবেশ করবেন না। এসব অফার লিঙ্কের মাধ্যমে ম্যালওয়্যার ও ভাইরাস প্রবেশ করতে পারে আপনার ডিভাইসে যার মাধ্যমে কার্ডের তথ্যসহ সকল স্পর্শকাতর তথ্যই প্রতারকের হাতে চলে যেতে পারে।
  • ফোন, এসএমএস বা ইমেইলে কার্ডের বিভিন্ন তথ্য পরিবর্তন সংক্রান্ত কোন ব্যাপারে কেউ যোগাযোগ করলে কার্ডের যে কোন ধরণের তথ্য দেয়া থেকে বিরত থাকুন এবং আপনার ব্যাংকে জানান। আপনার অনুমতি ছাড়া এসকল ব্যাপারে কেউ কখনই আপনার সাথে যোগাযোগ করবে না।

ডিভাইস এবং অ্যাপ ব্যবহারে করণীয়

  • অনলাইন ব্যাংকিংয়ের ক্ষেত্রে আমরা বিভিন্ন ডিভাইস যেমনঃ ল্যাপটপ, স্মার্টফোন, ট্যাবলেট ইত্যাদি ব্যবহার করে থাকি। এসব ডিভাইস সবসময় নিরাপদভাবে কনফিগার করা জরুরী। এ সম্পর্কে আপনার সঠিক জ্ঞান না থাকলে কারো কাছ থেকে জেনে সঠিকভাবে এসব ডিভাইসের নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন। এতে ডিভাইস চুরি হলেও আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে প্রবেশের ভয় কমে যাবে।
  • আপনার ডিভাইসের অপারেটিং সিস্টেমের সর্বশেষ ভার্সনে থাকতে চেষ্টা করুন। ডিভাইসগুলোর অপারেটিং সিস্টেম প্রতি বছরই নতুন নতুন নিরাপত্তা ফিচার ও সুবিধা নিয়ে আসে। তাই আধুনিক সকল ফিচার আপনাকে আরও নিরাপদ করবে। অ্যান্ড্রয়েড, আইওএস বা উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেম সবসময় আপডে রাখার চেষ্টা করুন।
  • অনলাইন ব্যাংকিংয়ের ক্ষেত্রে আপনার ব্যাংকের অফিসিয়াল অ্যাপ ছাড়া অন্য কোন অ্যাপ ব্যবহার করবেন না। যেসব অ্যাপ জনপ্রিয় এবং বিশ্বাসযোগ্য এসব অ্যাপ ছাড়া কোথাও আপনার অ্যাকাউন্ট বা কার্ডের তথ্য প্রদান করবেন না। নিরাপদ ও বিশ্বাসযোগ্য স্থান হতে অ্যাপ ইন্সটল করুন। এতে করে তথ্য চুরির ভয় অনেকটাই কমে যাবে।
সঠিক নির্দেশনা মানলে এবং সতর্ক থাকলে আপনার কার্ড ব্যবহার নিরাপদ থাকবে অনেকটাই। যদি কখনও আপনার কার্ডের তথ্য চুরি হবার ব্যাপারে সন্দেহ জাগে সাথে সাথে ব্যাংককে অবহিত করে কার্ডটি ব্লক করে দিতে পারেন। পরবর্তীতে সকল তথ্য পরিবর্তন করে আরও বেশি সতর্ক থেকে কার্ড ব্যবহার শুরু করতে পারবেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
1 জন কমেন্ট করেছেন ইতোমধ্যে
  • Ridoy
    Ridoy January 2, 2023 at 8:34 AM

    Nice post

মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

জরিপ টোয়েন্টিফোর ডটকম এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url