গর্ভবতী অবস্থায় মাথা ব্যাথার ঔষধ-মাথা ব্যাথা হলে করণীয় কি

গর্ভাবস্থায় মাথা ব্যথা সাধারণ বিষয়। বর্ধিত সাইনাস কনজেশন, ঘুমের ব্যাঘাত এবং ডিহাইড্রেশন গর্ভবতী নারীর মাথাব্যথার ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলতে পারে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে, গর্ভাবস্থার মাথা ব্যথা নিরীহ। কিন্তু যে মাথা ব্যথা হঠাৎ ঘটে এবং গর্ভাবস্থার দ্বিতীয়ার্ধে শুরু হয়, তা প্রিক্ল্যাম্পসিয়ার লক্ষণ হতে পারে। এটি বিপজ্জনক অবস্থা যার জন্য দ্রুত চিকিৎসার প্রয়োজন।

প্রিক্ল্যাম্পসিয়া কী?

প্রিক্ল্যাম্পসিয়া হলো একটি গর্ভাবস্থা-সম্পর্কিত জটিলতা, যা রক্তচাপ বাড়িয়ে দিতে পারে এবং গুরুতর ক্ষেত্রে অঙ্গসমূহের ক্ষতি করতে পারে। এটি সাধারণত গর্ভাবস্থার ২০ সপ্তাহ পরে শুরু হয়। যদি চিকিত্সা না করা হয় তবে এটি গুরুতর এবং এমনকি মারাত্মক জটিলতার কারণ হতে পারে। সবচেয়ে কার্যকরী চিকিৎসা হলো শিশুর প্রসব, যা গর্ভাবস্থায় খুব তাড়াতাড়ি প্রিক্ল্যাম্পসিয়া হলে সমস্যা হতে পারে। কারণ শিশুর পরিপক্ক হওয়ার জন্য সময় প্রয়োজন।

গর্ভবতীদের প্রায়ই মাথাব্যথা হয়, কেন?

প্রাথমিক কিছু কারণে মাথাব্যথা হয়। যেগুলোকে আমরা প্রাইমারি হেডেক বলি। এটা হয় দুশ্চিন্তা থেকে, শারীরিক পরিবর্তনের মানসিক চিন্তা থেকে। আবার মাইগ্রেনের ব্যথাও হতে পারে। এমনকি কোনো ইনফেকশন থেকেও এই ব্যথা হতে পারে। কানের সমস্যা, সাইনোসাইটিস, স্ট্রোক, মাথায় আঘাত থেকে শুরু করে করোনা, ডেঙ্গু—এসব কারণেও মাথাব্যথা হতে পারে। কোনো কারণে মাথায় রক্তক্ষরণ হলে বা মাথার ভেতরে রক্ত জমলে মাথাব্যথা হয়। গর্ভকালীন একলাম্পসিয়া বা প্রি–একলাম্পসিয়া যেটা হয়, এর কারণেও মাথাব্যথা হতে পারে। 

পিরিয়ডকালীন মাথাব্যথা-

মাইগ্রেনের প্রবণতা মেয়েদেরই বেশি। ১৫ থেকে ৩৫ বছর বয়সে সবচেয়ে বেশি মাথাব্যথা হয়। অনেকের আবার পিরিয়ডের সময় মাথাব্যথা হয়। পিরিয়ডের দুই দিন আগে থেকে পিরিয়ডের তিন দিন মাথাব্যথা হয়। কেননা, এ সময় এস্ট্রোজেনের পরিমাণ কমে যায়।
এ সময় ঠান্ডা জায়গায় থাকলে ভালো। প্যারাসিটামল, ক্যাফেইন, এসপিরিন আর বমির ওষুধ দিলে ঠিক হয়ে যায়। যাদের কোনো ওষুধেই কাজ হয় না, তাদের হরমোন ট্রিটমেন্ট দিতে হয়। মেনোপজের সঙ্গে মাইগ্রেন কমে যায়। কেননা, ওই সময় এস্ট্রোজেনের তেমন কাজ থাকে না। তাই শরীরে এস্ট্রোজেন থাকে।

গর্ভাবস্থায় মাথাব্যথার জন্য কী পরীক্ষা করতে হবে-

সাধারণত কোনো পরীক্ষা লাগে না। তবে মাথাব্যথার সঙ্গে জ্বর, প্রেশার, খিঁচুনি, হাত–পা অবশ হয়ে যাওয়া, ঘাড় শক্ত হয়ে যাওয়া—এগুলো থাকলে পরীক্ষা দিই। ইনফেকশনের জন্য রক্ত বা ইউরিনের পরীক্ষা এবং স্ট্রোকের কথা ভাবলে এমআরআই করি। তবে এক্স–রে বা সিটি স্ক্যান সাধারণত দিই না। এর রেডিয়েশনে বাচ্চার ক্ষতি হতে পারে। তবে মাথাব্যথায় অজ্ঞান হয়ে গেলে বা একলাম্পসিয়া হলে দেরি করা যাবে না। হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।

গর্ভাবস্থায় মাথা ব্যথার কারণ কী?

গর্ভাবস্থায় মাথা ব্যথা নয় সপ্তাহের পর থেকে বেশি হয় যখন রক্তের পরিমাণ এবং হরমোন বৃদ্ধি পায়। তবে গর্ভাবস্থায় যেকোনো সময় মাথা ব্যথা শুরু হতে পারে। এমন ধরনের মাথা ব্যথা হতে পারে যা আপনি আগে কখনও অনুভব করেননি। এই মাথা ব্যথা মাথার একপাশে বা উভয় পাশে ঘটতে পারে। জেনে নিন কী কারণে এই মাথা ব্যথা হতে পারে-

রক্তের পরিমাণ বৃদ্ধি-

গর্ভাবস্থায় রক্তের পরিমাণ বৃদ্ধি সাইনাসের উপর চাপ বাড়াতে পারে, যার ফলে সাইনাস থেকে মাথা ব্যথা হতে পারে গর্ভাবতী মায়ের।

ঘুমের ব্যাঘাত-

গর্ভাবতী নারীর পর্যাপ্ত ঘুম না হলে মাথা ব্যথা হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।

পানিশূন্যতা-

গর্ভাবস্থা-সম্পর্কিত বমি বমি ভাব গর্ভাবতী মাকে পর্যাপ্ত পানি পান করা থেকে বিরত রাখতে পারে, ডিহাইড্রেশন দেখা দিলে তা মাথা ব্যথার ঝুঁকি বাড়ায়।

ক্ষুধা-

যত খাবারই খাওয়া হোক না কেন, হবু মায়ের অতিরিক্ত ক্ষুধা লাগতে পারে এবং রক্তে শর্করার পরিমাণ কমে যেতে পারে। যা মাথা ব্যথার কারণ হতে পারে।

হরমোনের ওঠানামা-

হরমোনের ওঠানামা জন্য গর্ভাবস্থায় মাইগ্রেনের ব্যথা শুরু করতে পারে।

চিন্তা-

ওজন বৃদ্ধি এবং শরীরের পরিবর্তন কাঁধ এবং ঘাড়ে চাপ বাড়ার ফলে মাথা ব্যথা হয়।

ক্যাফেইন বাদ দিলে-

অনেক মহিলা গর্ভাবস্থায় ক্যাফেইন সম্পূর্ণরূপে ত্যাগ করেন, যা ফলে মাথা ব্যথা এবং ক্লান্তির কারণ হতে পারে।

উচ্চ রক্তচাপ-

প্রিক্ল্যাম্পসিয়া সম্পর্কিত উচ্চ রক্তচাপ মাথা ব্যথার কারণ হতে পারে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এটি দেখা দিতে পারে গর্ভধারণের ২২ সপ্তাহ পরে। আপনি যদি হঠাৎ মাথা ব্যথা অনুভব করেন, যা আপনি আগে কখনও অনুভব করেননি তবে দ্রুত ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন।

কীভাবে মাথা ব্যথা থেকে মুক্তি পাবেন-

প্রথমে আপনার মাথা ব্যথার কারণ চিহ্নিত করার চেষ্টা করুন। তাহলে এর সমাধান করা সহজ হবে। জেনে নিন গর্ভাবস্থায় মাথা ব্যথা দূর করতে কী কী করতে পারবেন-

পানি পান করুন-

যখনই মাথা ব্যথা অনুভব করবেন তখন এক গ্লাস পানি পান করুন। এটি আপনাকে ডিহাইড্রেশনের কারণে সৃষ্ট মাথা ব্যথা থেকে মুক্তি দিতে পারে।

অন্ধকার এবং নিরিবিলি ঘরে বিশ্রাম করুন-

বিশ্রাম উত্তেজনা কমাতে পারে এবং মাথা ব্যথা ব্যাহত করতে পারে। বিশ্রামের সময়, ফোন বা কোনো গ্যাজেটের দিকে তাকানো থেকে এড়িয়ে চলুন।

গরম বা ঠান্ডার প্রয়োগ-

গরম এবং ঠান্ডা উভয়ই মাথা এবং ঘাড়ের পেশী শিথিল করতে পারে। যেটি আপনার জন্য কার্যকরী মনে হবে সেটি বেছে নিতে পারেন।

মাথার ত্বক এবং ঘাড় ম্যাসাজ-

ম্যাসাজ গর্ভাবতী মায়র মাথা ব্যথা উপশম করতে, রক্ত ​​সঞ্চালন উন্নত করতে এবং শিথিলতা বাড়াতে সাহায্য করতে পারে।

কখন ডাক্তারের সাথে দেখা করবেন-

গর্ভাবস্থার ত্রৈমাসিকের সময় প্রিক্ল্যাম্পসিয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। আপনি যদি চোখের দৃষ্টিতে সমস্যা অনুভব করেন, তাহলে দ্রুত ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলুন। কারণ এটি প্রিক্ল্যাম্পসিয়ার লক্ষণ হতে পারে।

পরামর্শ

গর্ভকালীন মাথাব্যথা খুবই সাধারণ ব্যাপার। এটা নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই। দুশ্চিন্তা করলেই বরং মাথাব্যথা হবে। এই সময় চিন্তামুক্ত জীবন যাপন করতে হবে। ঠিকমতো খেতে হবে, ঘুমাতে হবে। আর যদি অনেক ব্যথা করে তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। অনেকের আবার গর্ভাবস্থায় চকলেট খেতে ইচ্ছা করে, কিন্তু চকলেট খেলে মাথাব্যথা হয়। এ ক্ষেত্রে সংযম করাই ভালো।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

জরিপ টোয়েন্টিফোর ডটকম এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url